১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

৮ বছর পর মধ্যপাড়া খনিতে আবারও পাথর উত্তোলন বন্ধ

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দেশের একমাত্র দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে অদক্ষ বিপণন ব্যবস্থার কারনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তোলন বাড়লেও পাথর বিক্রিতে গতি নেই। প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মে.টন পাথর। ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত খনির ৯টি ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের পাথর মজুদ রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন।

এদিকে পাথর রাখার স্থান না থাকায় খনির উৎপাদন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। ঘোষনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খনি উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে খনিতে কর্মরত প্রায় ৭ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মবিরতী দেওয়া হয়েছে।

দৈনিক পাথর উত্তোলনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬ হাজারের অধিক পাথর উত্তোলন করে খনির উৎপাদন ইতিহাসে ইতিমধ্যে নতুন রেকর্ড গড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। খনিতে দৈনিক পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে কখনও একদিনে এত বিপুল পরিমাণ পাথর উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় গত ডিসেম্বর মাসে পাথর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। আর পাথর বিক্রি হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে মাত্র ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। দৈনিক পাথর বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে পাথর উত্তোলন বাড়লেও বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কম। ফলে কোম্পানিটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খনি কর্তৃপক্ষের বাস্তবসম্মত বিপণন ব্যবস্থা না থাকা ও পাথর পরিবহনে মোটরযানের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ আরোপ হওয়ায় পাথর বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খনি কর্তৃপক্ষের বাস্তবসম্মত বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় পাথর বিক্রিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিক্রয়নীতি বাজার উপযোগী না হওয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এর আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে খনি কর্তৃপক্ষের অদক্ষ বিপণন ব্যবস্থার কারণে পাথর খনির ৯টি ইয়ার্ডে প্রায় ৭ লাখ টন পাথর অবিক্রীত থাকার পর পাথর খনিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে অবিক্রীত পাথরের স্তূপ ক্রমবর্ধমান বাড়ায়, পাথর খনিটি আবারো বন্ধ হয়ে গেল। এ অবস্থায় খনির উপর নির্ভরশীল শ্রমিক ও খনি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জীবন ও জীবিকা নির্বাহে অপূরণীয় ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন করেও সময়মতো বিল পাচ্ছে না খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। এ অবস্থায় অর্থ সংকটে পড়ে উৎপাদন বিল না পাওয়ায় ৭ শতাধিক দেশীয় এখনি শ্রমিক-কর্মচারী ও প্রায় শতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উৎপাদনকারি ঠিকাদারকে।

মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ ও উৎপাদন ঠিকাদার জিটিসির মাঝে প্রাইস এডজাস্টমেন্ট নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় পুরোদমে পাথর উৎপাদন করেও জিটিসি শতভাগ বিল পাচ্ছে না। খনি কর্তৃপক্ষ গেল বছরের মার্চ মাস থেকে ঠিকাদারের প্রতি মাসের উৎপাদন ও আনুষঙ্গিক খরচের বিলের ৭৫ শতাংশ দিচ্ছে। প্রাতি মাসে ২৫ শতাংশ বিল কম দেয়ায় জানুয়ারী পর্যন্ত ১১ মাসে জিটিসির পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চলতি ফেব্রæয়ারি মাসেও সম্পূর্ণ বিল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর ফলে জিটিসির পাওনার পরিমাণ বেড়ে হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত ১১ মাসে প্রায় ১০ লাখ টন পাথর উৎপাদন করেছে জিটিসি। গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ কম দেয়া হয়েছে, যা প্রদত্ত বিলের ২৫ শতাংশ। প্রাইস এডজাস্টমেন্ট না হওয়ায় খনি কর্তৃপক্ষ এভাবে জিটিসির টাকা আটকে রেখেছে। প্রাইস এডজাস্টমেন্ট (মূল্য সমন্বয়) করে জিটিসির বকেয়া পাওনাসহ নিয়মিত বিল পরিশোধ না করা নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

খনির একটি সুত্র জানিয়েছেন, খনিতে পাথর উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) গত ডিসেম্বর খনি থেকে ১ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন করে পাথর উত্তোলন করে। নবেম্বর মাসে ১ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন এবং অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪২ হাজার পাথর উত্তোলন করা হয়। পাথর বিক্রির কাজটি তদারক করে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি। এ অবস্থায় পাথর বিক্রিতে গতি আনতে পাথরের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর মাসে তারা শূন্য থেকে ৫ মিলি ডাস্ট পাথর ১ হাজার ২৫০ টাকা, ৫ মিলি থেকে ২০ মিলি পাথর ৩ হাজার ১৫০ টাকা, ২০ মিলি থেকে ৪০ মিলি পাথর ৩ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা, ৪০ মিলি থেকে ৬০ মিলি পাথর ৩ হাজার ৮০০ টাকা, ৬০ মিলি থেকে ৮০ মিলি পাথর ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ২৫০ মি.মি. বোল্ডার পাথর ৩ হাজার ২শ টাকা প্রতি মেট্রিক টন দর নির্ধারণ করে বিক্রি করছে। প্রতি মেট্রিক টন ক্রাস্ড পাথরের লোডিং চার্জ ৬০ টাকা এবং বোল্ডার পাথরের লোডিং চার্জ ৮০ টাকা।

মধ্যপাড়া পাথর খনির কর্মকর্তা ও ডিলাররা জানিয়েছেন, আগে ১০ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৪২ থেকে ৪৬ মেট্রিক টন ও ৬ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৩০ থেকে ৩২ মেট্রিক টন পাথর পরিবহন করত। কিন্তু ২০১৮ সালের মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী ১০ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৩২ মেট্রিক টন ও ৬ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ২২ মেট্রিক টনের বেশি পাথর বহন করতে পারছে না। ফলে পাথর বিক্রি অনেকটা কমেছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিঃ-এর একাধিক ডিলার জানান, পাথর বিক্রি না হওয়ার মূল কারণ হলো বিপণন ব্যবস্থা। মধ্যপাড়া পাথর খনিতে গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী পাথরের সাইজ পাচ্ছে না। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথর সাইজ অনুযায়ী পাওয়া যায়। ফলে পাথর ব্যবসায়ীরা মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর না কিনে হিলি স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর কিনছে। সামগ্রিকভাবে লাভ কমে যাওয়ায় পাথর বিক্রিতে আমাদের আগ্রহ কমে গেছে। কারণ সেখান থেকে আনা পাথরের মূল্য মধ্যপাড়ার তুলনায় কম পড়ছে। এ কারণেই মধ্যপাড়া খনিতে পাথর বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। মধ্যপাড়া খনির সাথে চুক্তিবদ্ধ বর্তমানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন ডিলার রয়েছেন। এক সময় সেখানে প্রায় ১শ’ ৫০ জন ডিলার ছিলেন।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
ডিসে ১২, ২০২৪
temperature icon 20°C
clear sky
Humidity 37 %
Pressure 1017 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 3 mph
Clouds Clouds: 5%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:42
Sunset Sunset: 17:16

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top