২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

স্বাগত ১৪৩২, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

মিরর ডেস্ক : ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। আজ পহেলা বৈশাখ, বাঙালিদের দিন। বিগত বছরের মলিনতা মুছে দিয়ে নতুন আলোয় স্নাত বাঙালি জাতি আজ প্রবেশ করছে নতুন বর্ষে। আজ ১৪৩২ বাংলা সালের প্রথম দিন। ১৪৩১ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন বছর। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে বুকভরা প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যম ও সম্ভাবনার নতুন বছরে পা রাখলো বাঙালি জাতি। সব গ্লানি ঝেড়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় নতুন বছরকে বরণ করে নেবে সবাই।

নতুন বছর মানেই রঙিন হয়ে ওঠার হাতছানি, নতুন আশায় পথচলা। তাই পহেলা বৈশাখে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ। এবারও বর্ণিল উৎসবে মাতামাতি হবে। দেশব্যাপী থাকবে বর্ষবরণের নানান আয়োজন। উৎসব আমেজে মুখর হবে চারদিক। পথেঘাটে, মাঠে-মেলায় উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বিভিন্ন আয়োজনে দেখা যাবে সব বয়সীদের প্রাণচাঞ্চল্য। নব আনন্দে জাগবে গোটা জাতি।

পহেলা বৈশাখ প্রথমে চালু হয় মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে (১৫৫৬-১৬০৯)। তখন কৃষি উৎপাদনের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল অর্থনীতি। বাংলায় কৃষি অর্থনীতি আবর্তিত হতো ছয় মাসের ভিত্তিতে। মুঘল শাসনামলে কৃষকদের খাজনা দিতে হতো হিজরি দিনপঞ্জি অনুযায়ী। কিন্তু ফসল উৎপাদনের সময়ের সঙ্গে তা ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ। কারণ, খাজনা আদায়ের সময় প্রজাদের থাকতে হতো ফসলের অপেক্ষায়। এ কারণে খাজনা পরিশোধ করতে সমস্যার সম্মুখীন হতো দুই পক্ষই। এর সমাধান খুঁজতে নিজের রাজসভার পণ্ডিতদের দায়িত্ব দেন সম্রাট আকবর। এর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ফতেউল্লাহ সিরাজী।

এরপর কৃষি অর্থনীতির ছয় মাসের আবর্তনকে মাথায় রেখে তৈরি হয় নতুন দিনপঞ্জি। তখন চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে ও পহেলা বৈশাখের আগে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের উৎসবের কথা উত্থাপন করেন আকবরের রাজসভার কয়েকজন পণ্ডিত। সেই থেকে এই উদ্যোগ খাজনা আদায়ের উৎসব হিসেবে উদযাপন হয়ে আসছিল। ওই উৎসবে চৈত্র মাসের শেষ দিন ছিল খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে বর্ষবিদায় ও পহেলা বৈশাখ ছিল ঘরে নতুন ফসল তোলার মাধ্যমে বর্ষবরণ।

পূর্ব পাকিস্তানে দিনটি উদযাপন করা হতো বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জাতীয় উৎসব হিসেবে বাংলাদেশে উদযাপন হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ। বাংলা একাডেমি ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ হিসেবে ক্যালেন্ডারে স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। এদিন তাই বৈশাখ মাসের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করা হয়।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসুন, আমরা বিগত বছরের গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যে ‘পহেলা বৈশাখ’ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আবহমান কাল ধরে নববর্ষের এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণ স্পন্দনে, নব-অঙ্গীকারে।

এবছর বাংলা নতুন বছরকে বরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ সেজে উঠেছে নতুন সাজে, নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রতীক এ দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার প্রথমবারের মতো ১৪৩২ সালের বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারো সহ অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন পার্বত্য জেলা এবং অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলগুলোর শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সমন্বয় করবে। পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে ভোরে রমনা বটমূলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ছায়ানট। বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বৈশাখী মেলার আয়োজন করবে।

কর্মসূচি অনুসারে, পহেলা বৈশাখে প্রতিটি ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সেইসঙ্গে, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির জাতিগত গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একইসঙ্গে বৈসাবি উৎসব উদযাপন করবে।

জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে সব জাদুঘর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এদিন লাগবে না কোনও টিকিট।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
এপ্রি ২০, ২০২৫
temperature icon 26°C
scattered clouds
Humidity 67 %
Pressure 1006 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 7 mph
Clouds Clouds: 40%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 05:38
Sunset Sunset: 18:30

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top