মিরর ডেস্ক : বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার শেষ প্রান্তে মাছ আহরণের সময় দুটি ট্রলারসহ আটক করে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি জেলে-নাবিকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জব্দ দুটি ট্রলারের একটি এফভি মেঘনা-৫ এর মালিকনাধীন প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াহেদ আটক নাবিকদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আটক নাবিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পারাদ্বীপ বন্দরে নিয়ে যাওয়ার পর ওই দেশের পুলিশ আজ সকালে তাদেরকে ট্রলার থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করে আবার ট্রলারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাবিকরা আমাদের জানিয়েছেন ভারতীয় পুলিশ তাদেরকে ট্রলারে ফেরত পাঠানোর সময় বলেছে- আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করিনি। তোমাদেরকে কোস্টগার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
কবে নাগাদ ফেরত পাঠাতে পারে জানতে চাইলে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘যেহেতু নাবিকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তাই খুব বেশি দেরি হবে না। আমাদের কোস্টগার্ডের সঙ্গে ভারতের কোস্টগার্ড যোগাযোগ করে একটি শিডিউল তৈরি করবে। এরপরই হয়তো নাবিকদের ট্রলারসহ ফেরত পাঠানো হবে।’
সোমবার সকাল ১০টার দিকে খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার শেষ প্রান্তে মাছ আহরণের সময় ৭৯ জেলে-নাবিকসহ দুটি ট্রলার জব্দ করে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। নাবিকসহ ট্রলার দুটি ভারতের উড়িষ্যার পারাদ্বীপ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে ট্রলার দুটি ওই বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে।
জব্দ করা দুটি ট্রলার হলো– এফবি মেঘনা ৫ ও এফভি লায়লা ২। এফভি মেঘনা–৫ এর মালিক প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড। আর এফভি লায়লা–২–এর মালিক প্রতিষ্ঠান এস আর ফিশিং।
মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় কোস্টগার্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও এক্সে (সাবেক টুইটার) এ সংক্রান্ত একটি আপডেট পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ভারতীয় জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ ধরার কারণে ৭৮ জেলেসহ দুটি বাংলাদেশি ফিশিং ট্রলার জব্দ করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। আইনি ব্যবস্থা নিতে জব্দ হওয়া ট্রলার দুটি প্যারাদ্বীপে আনা হয়েছে।’
ওই পোস্টে তিনটি ছবিও যোগ করে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। একটি ছবিতে দেখা গেছে- ট্রলারের ডেকের ওপর বেশ কজন নাবিক মাথার পেছনে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। তাদের পেছনে সশস্ত্র অবস্থায় ভারতীয় কোস্ট গার্ডের সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। আরেক ছবিতে দেখা গেছে, সাগরে ট্রলার দুটি পাশাপাশি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্য ছবিতে দেখা গেছে, একটি ট্রলার জেটিতে ভেড়ানো হয়েছে।
ট্রলার দুটির মালিকপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার রাতে তারা জানতে পারেন ভারতীয় কোস্টগার্ড ট্রলার দুটি জব্দ করেছে। ভারতীয় কোস্টগার্ডের অভিযোগ- ট্রলার দুটি বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে তাদের সীমানায় গিয়ে মাছ আহরণ করছিল।
এরপর মালিকপক্ষ চিঠি দিয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় বুধবার বিকালে আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ট্রলারগুলো ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের কোস্টগার্ডসহ সরকারি সংস্থাগুলো ভারতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।