স্টাফ রিপোর্টার : সোমবার দিনাজপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তীব্র শীতে মানুষ বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন যাপন করছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। যদিও সকালেই সূর্য উঠেছে। তবে প্রখরতা খুব বেশি একটা নেই, সঙ্গে হিমেল বাতাসের প্রভাব আরও নাজেহাল করে তুলেছে মানুষকে। শীতের যখন এমন অবস্থা, তখন সরকারি নির্দেশনা থাকলেও দিনাজপুরের অধিকাংশ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলগুলোয় হচ্ছে পাঠদান। এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত দেননি শিক্ষা কর্মকর্তা।
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে দিনাজপুরের দ্বিতীয় সর্ব সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সোমবার বাতাসের আর্দ্রতা ৮৮ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। এর আগে রবিবার এই জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ৯৭ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার।
তীব্র শীতের কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন এই এলাকার মানুষজন। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষজন। তারা কাজে বের হতে পারছেন না, আর বের হলেও ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। ফলে তাদের আয়-উপার্জনে পড়েছে ভাটা। তাছাড়া হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে গরম কাপড়ের চাহিদা। শীতের কারণে তারা কাজে টিকতে পারছেন না। মাঝে মাঝেই কাজ বন্ধ করে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে কুন্ডলি পাকিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। মাঠে কৃষিকাজ প্রায় হচ্ছেই না। শীতার্ত ও ছিন্নমূল মানুষেরা কনকনে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য অনেকেই বাড়ির আঙিনা ও ফুটপাতসহ চায়ের দোকানের চুলায় বসে আগুন পোহাচ্ছেন। অন্যদিকে দিন দিন শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার মতো ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ।
এদিকে তাপমাত্রা কম থাকলেও জেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হচ্ছে পাঠদান। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা না পাওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান হচ্ছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার চেরাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে যথারীতি চলছে পাঠদান। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলো বন্ধ না করে পূর্বের মতোই ক্লাস পরীক্ষা চালু রাখা হয়েছে। ফলে এই তীব্র হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলেও বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধের বিষয়ে কোনও নির্দেশনা না দেওয়ায় তারা পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাপমাত্রা কম হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
অপরদিকে জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে এবং সব পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তার এই নির্দেশনার পরও জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক, কিন্ডার গার্ডেন ও মিশনারি স্কুলগুলোতে পাঠদান অব্যাত রয়েছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এই মাসে আরও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করবে।