২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

দিনাজপুরে ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মজুতদাররা-অভিযানে কমছে দাম

স্টাফ রিপোর্টার : ধানের জেলা দিনাজপুরে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের এক দিনের মজুতবিরোধী অভিযানেই বাজারে ধানের দাম কমেছে বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। সেই সঙ্গে বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে ধানের সরবরাহ। মিল মালিকরা বলছেন, কৃষকদের কাছে ধান কিনে বিপুল মজুত গড়ে তুলেছেন এক শ্রেণির মজুতদার। এ কারণেই ধানের বাজার জিম্মি মজুতদারদের কাছে। খাদ্য বিভাগ বলছে, মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভাঙতে অব্যাহত থাকবে এই অভিযান। এতে এক পর্যায়ে চালের বাজার সহনশীল পর্যায়ে আসবে বলে আশা করছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

দিনাজপুর সদর উপজেলার অন্যতম বৃহত ধানের হাট গোপালগঞ্জ। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার বসে এই ধানের হাট। গত সোমবার এই হাটের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা ফাঁকা থাকলেও শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়-ধান রাখার জায়গা নেই এই হাটে। সরবরাহ অস্বাভাবিক। ভরা মৌসুমের চেয়েও বেশি ধান উঠেছে হাটে। তবে হাটে ধান বিক্রেতাদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যা কম থাকলেও যারা ধান কিনে মজুত রেখেছিল, তাদের সংখ্যাই বেশি।

গোপালগঞ্জ হাটের ইজারাদার মো. আব্বাসের প্রতিনিধি বলরাম জানান, গতহাটে (সোমবার) ধান উঠেছিল ২ হাজার ২০০ বস্তার মতো। শুক্রবার বাজারে ধান উঠেছে ২ হাজার ৭০০ বস্তারও বেশি। তবে দাম কমে যাওয়ায় অনেকে ধান ফেরত নিয়ে গেছে। শুক্রবার ঐ হাটে ১ হাজার ৮০০ বস্তার মতো ধান বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

হঠাত্ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় গত হাটের তুলনায় বস্তাপ্রতি ধানের দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত হাটে (সোমবার) বিআর-৫১ জাতের ধান প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) ২ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হলেও শুক্রবার তা বিক্রি হয় ২ হাজার ২০০ টাকা দরে। বিআর-৯০ জাতের ধান ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে নেমে ৩ হাজার ৪০০ টাকা দরে,  সুমন স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে নেমে ২ হাজার ৩২৫ টাকা দরে, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে নেমে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে, বিআর-১১ জাতের ধান ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে নেমে ২ হাজার ২৫০ টাকা দরে এবং বিআর-৩৪ জাতের ধান ৫ হাজার ৪০০ টাকা থেকে নেমে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৯০০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রকারভেদে ধানের দাম কমেছে বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

গোপালগঞ্জ হাটে বীরগঞ্জ থেকে ২০ বস্তা ধান বিক্রি করতে আসেন আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, গত হাটের তুলনায় প্রতি বস্তা ধানে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা নেই। এতে লোকসান গুনতে হবে তাকে। কত বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি আমতা আমতা করে উত্তর দেন—এই ধান তিনি কিনে রেখেছিলেন।

তবে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক রহমান ও রিয়াজুল জানান, বোরো ধান আবাদের জন্য কিছু ধান রেখেছিলেন। এখন বোরো মৌসুম শুরু হচ্ছে। তাই এই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়লেন তারা।

গোপালগঞ্জ হাটে কথা হয় ধান ক্রেতা সাহেব আলীর সঙ্গে। হাটে ধান কিনে মিল মালিকের কাছে সরবরাহ করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকারি অভিযান শুরুর পর হাটে ধানের সরবরাহ বেড়েছে। আর মিল মালিকরাও ধান কেনা ও দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য বাধ্য হয়েই তাদের কিছুটা কমদামে ধান কিনতে হচ্ছে।

গোপালগঞ্জে হাটে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, কৃষকের ধান এখন লাইসেন্সবিহীন মজুতদারদের কাছে। ধান কাটা মাড়াইয়ের সময় মিল মালিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা বেশি দামে ধান কিনে মজুত করেছেন। ধানের বিপুল মজুত গড়ে এখন তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মিল চালু রাখতে মিল মালিকরাও তাদের কাছে জিম্মি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ১৩ মাইল গড়েয়া, কাহারোল বাজার, বীরগঞ্জ হাটখোলা, গোলাপগঞ্জ, কবিরাজহাট, উত্তর গড়েয়া, চিরিরবন্দর কারেন্টের হাট, ভুষিরবন্দর, বিন্যাকুড়ি বাজারসহ বেশ কিছু এলাকার বিশাল বিশাল গোডাউন তৈরি করে অবৈধ মজুতদাররা হাজার হাজার বস্তা ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। খাদ্য বিভাগের অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এসব স্থানে এই অভিযান যদি চালানো হয়, তাহলে বাজারে ধান-চালের দাম কমে আসবে। সাধারণ মানুষ ও মিল মালিকদের স্বার্থে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ব্যবসায়ী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আজকাল অনেকেই স্টক বিজনেসের নামে ধানসহ এসব ভোগ্যপণ্য মজুত করছেন। বর্তমানে মিল মালিকদের চাইতে স্টক ব্যবসায়ীদের গুদাম ঘরে বেশি ধান আছে। মৌসুমের শুরুতে বেশি দামে কিনে মজুত করছেন। পরে মিল মালিকরাই এসব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আরও বেশি দামে কিনছেন। তিনি বলেন, সরকারি অভিযান শুরুর পর অবৈধ মজুতদাররা স্থবির হয়ে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে লাইসেন্সবিহীন মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বাজারে অস্বাভাবিক ধান-চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার থেকে মজুত-বিরোধী অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় বিপুল পরিমাণ ধান মজুত রাখায় বৃহস্পতিবার একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে গুদামটি সিলগালা করেছে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, আমন মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপন্ন হয়েছে। তাই সংকটের কোনো কারণই নেই। সেখানে ধান-চালের দাম বাড়ছে এক শ্রেণির মজুত ব্যবসায়ীর কারণে। তারা সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিপুল পরিমাণ ধান মজুত রেখেছেন। আর এই অভিযান তাদের বিরুদ্ধে। আমরা বৃহস্পতিবার বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। শুক্রবারও অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আর এর সুফল ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে। একদিনে বস্তাপ্রতি ধানের দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এতে চালের দাম সাধারণ মানুষের সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুর জেলায় এবার মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। চালের পরিমাণে যার উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
জানু ২২, ২০২৫
temperature icon 15°C
clear sky
Humidity 56 %
Pressure 1011 mb
Wind 2 mph
Wind Gust Wind Gust: 2 mph
Clouds Clouds: 0%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:52
Sunset Sunset: 17:41

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top