১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ফ্লু ভাইরাসের মৌসুম: গবেষণা

ঢাকা : দেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসকে ফ্লু ভাইরাসের মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর,বি-র গবেষকরা যৌথভাবে বছরব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্সের তথ্য পর্যালোচনা করে একথা জানিয়েছেন। বুধবার (১৭ এপ্রিল) মহাখালীর আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে ২০০৭ সাল থেকে দেশব্যাপী বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইউএস-সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় এই সার্ভেইল্যান্সটি বাংলাদেশে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের ১৯টি হাসপাতালে চলমান এই সার্ভেইল্যান্সের মুল লক্ষ্য— বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৌসুমী বৈচিত্র্য বোঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত করা।

সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়— এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে। তাই এই সময়টাকে গবেষকরা ফ্লু’র মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নেওয়ার সুপারিশ করেন গবেষকরা। এছাড়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।

আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. ফাহমিদা চৌধুরী বিশ্বব্যাপী ফ্লু সংক্রমণের ধরন সম্বন্ধে ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি বছর দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করে।’ এছাড়া,  তিনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমী বৈচিত্র্য তুলে ধরার পাশাপাশি এবং ফ্লু টিকা দেওয়ার সঠিক সময়ের উপর ধারণা দেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ তাদের ফ্লু মৌসুমের আগে ফ্লু ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।’

আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ রোগীর মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়া, হাসপাতালে ভর্তি ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে প্রায় প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১ জন হাসপাতালেই মারা যান।’ তবে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি দেখা যায় বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে সারাবছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে। তবে প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু শনাক্তের হার বৃদ্ধি পায় এবং  জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয়। এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’

তিনি মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখার প্রতি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইনফ্লুয়েঞ্জার একটা মহামারির সম্ভাবনা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার প্রতিরোধের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘চলমান এই ফ্লু’র মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেয়— তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যেন ওষুধের প্রতি রেজিসট্যান্স তৈরি না হতে পারে। এছাড়া হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারাবছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয়, অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারবো।’

আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে তার বক্তব্যে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআর,বি-র বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩ শতাংশ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়েদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার ড. এএসএম আলমগীর, ইউএস-সিডিসি-এর এপিডেমিওলজিস্ট, ড. গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি)এবং ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
ডিসে ১২, ২০২৪
temperature icon 21°C
clear sky
Humidity 37 %
Pressure 1016 mb
Wind 5 mph
Wind Gust Wind Gust: 4 mph
Clouds Clouds: 5%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:42
Sunset Sunset: 17:16

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top