টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে উলঙ্গ করে র্যাগিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা এক কলেজ শিক্ষার্থীর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে র্যাগিংয়ের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের শিক্ষার্থী তুষার।
জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় কলেজে ক্লাস চলাকালীন সময় এই কলেজে অধ্যায়নরত মৃদুলের নেতৃত্বে অর্পণ, আশরাফুল ও ফাহিম তুষারকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলের চেপে পুরাতন থানা ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে শরীরের কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং কান ধরে উঠবস করায়। এসব কর্মকাণ্ড গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরে এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
পরের দিন ৬ ডিসেম্বর সকালে তুষার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখতে পায় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আর তাই ফেসবুক লাইভে এসে ঘরে থাকা ইদুঁর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে বন্ধুরা লাইভ দেখে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তুষার পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার গৌরিশ্বর গ্রামের মনিরুজ্জামানের ছেলে। এসব তথ্য উল্লেখ করে কালিহাতী থানার একটি লিখিত অভিযোগ করে।
এ বিষয়ে তুষার জানান, কলেজে আসার শুরু থেকেই অর্পণ সিদ্দিকী, ফাহিম, আশরাফুলরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করে কেননা তারা স্থানীয় আমরা দুর থেকে আসি। তারা আমাকে ও আমার বন্ধুদের ৪/৫ বার মারছে কখনোই কাউকে বলি নাই। সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে, মারধর করেছে, উলঙ্গ করে কান ধরিয়েছে এবং ভিডিও করে ভাইরাল করে দিছে। এ কারণে আমি আত্মহননের পথ বেঁচে নেই। আমার বন্ধুরা আমাকে হাতপাতালে ভর্তি করে এবং দুদিন চিকিৎসা শেষে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) কালিহাতী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। তারা অভিযোগের কথা জানতে পারে আমি কলেজে গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি রুমে বসিয়ে রাখে এবং স্থানীয় কয়েকজন নেতা আমার মা-বাবাকে ডেকে এনে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য অহেতুক ঝামেলা করে। কিন্তু আমরা অভিযোগ তুলব না,আমি চাই অপরাধীদের শাস্তি হোক।
এদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ সমাধানের জন্য দুপক্ষকে নিয়ে বসলে কোনো সমাধান না হওয়ায় দুপক্ষকে মাঝে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় কালিহাতীর পৌর বিএনপি সাংঠনিক সম্পাদক মুজ্জাহিদ আহত হন। পরে গুরুতর অবস্থায় মুজ্জাহিদকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ কারণে রাজনৈতিক ভাবে কালিহাতীর বিএনপি নেতাদের মাঝে পক্ষ বিপক্ষে অবস্থান সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের অধ্যক্ষ মো.মজিবর রহমান জানান, তুষার ঘটনাটি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি পরে তুষার কলেজে আসলে তার নিরাপত্তার জন্য তার অভিভাবক হাতে তুলে দেই। পরে শুনেছি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি এক নেতা আহত হয়েছেন।
কালিহাতী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম ভুঁইয়া জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু কলেজের ঘটনা থাকায় আমি দুই পক্ষকে কলেজেই সমধান করার কথা বলে আমার পক্ষ থেকে স্বাভাবিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজে হামলার ঘটনা ঘটে । এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।