পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় অবিক্রীত পাথরের স্তূপ ক্রমেই বাড়ছে। দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষের ক্রটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে পাথর উত্তোলন বাড়লেও, পাথর বিক্রিতে কোন গতি আসছে না। খনি থেকে প্রতিদিন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন হলেও, বর্তমানে দৈনিক ৬ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পাথর উত্তোলন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। অথচ বর্তমানে দৈনিক পাথর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার মেট্রিক টন। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় গত জুন মাসে পাথর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। আর জুন মাসে পাথর বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৭ হাজার মেট্রিক টন।
২৯ জুলাই পর্যন্ত খনির ৯টি ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের পাথর ৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় পাথর বিক্রির পরিমান না বাড়ায় কোম্পানিটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, খনি কর্তৃপক্ষের বাস্তবসম্মত বিপণন ব্যবস্থা না থাকায়, পাথর বিক্রিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিক্রয়নীতি বাজার উপযোগী না হওয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এর আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে খনি কর্তৃপক্ষের অদক্ষ বিপণন ব্যবস্থার কারণে পাথর খনির ৯টি ইয়ার্ডে প্রায় ৭ লাখ টন পাথর অবিক্রীত থাকার পর, পাথর খনিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পাথর রাখার জায়গার অভাবে ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাথর উত্তোলন ও খনি উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নাশকতায় ইন্ধনদানের অভিযোগে গত ২১ জুলাই রাতে মধ্যপাড়া পাথর খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ রফিজুল ইসলাম রিটুকে তার রংপুরের বাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ মুখ খুলছেন না। তবে তাকে বাচাঁতে খনির একটি বিশেষ চক্র উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে খনির মালামাল ক্রয়ে ঠিকাদারী, পাথরের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
মধ্যপাড়া খনির পাথর বিক্রিতে ধ্বস নামার বিষয়ে খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং এন্ড সেলস) রাজীউন নবী বলেন, কোন কোন দিন দুই হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর বিক্রি হয়। আবার কোনদিন একেবারেই বিক্রি হয় না। এমনও দিন আসে, যেদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর বিক্রি হয়ে থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, পাথর বিক্রি না হওয়ার মূল কারণ হলো, বিপণন ব্যবস্থায় ক্রটি। এ কারণেই মধ্যপাড়ায় পাথর বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।