২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

আপনারা শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত, সাবধান হয়ে যান, চাল ব্যবসায়ীদের মন্ত্রী

বগুড়া : চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ‘শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত’ মন্তব্য করে বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভরা মৌসুমে চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো যুক্তি নেই। কৃত্রিমভাবে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে আপনারা ব্যবসায়ীরা একে অপরকে (মিল মালিক, আড়তদার, খুচরা ও পাইকারি বিক্রিতা) দোষারোপ করেন। আপনারা শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত। তবে আইন বসে থাকবে না। আপনারা যত চালাক, আইন তার চেয়ে বেশি চালাক। এখনই সাবধান হয়ে যান। নতুন আইন হচ্ছে। শুধু জরিমানাই নয়, জেলেও যেতে হতে পারে।’

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বগুড়ার চালকল, আড়ত এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের দায়ী করেন। আড়তদাররা মিল মালিকদের দায়ী করেন। মিল মালিকরা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ উত্থাপন করেন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী আড়তদার এবং মিল মালিকদের বিরুদ্ধে গোপন স্থানে ধান ও চাল মজুদের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন, ‘অবৈধ মজুদের পাশাপাশি তারা বিক্রির রশিদের লেখা দরের চেয়ে কম দামেও বিক্রি করে ধান চাল বিক্রির টাকা অন্য ব্যবসার হিসাবে জমা রাখছে, যা এক ধরনের মানি লন্ডারিং।’

সভায় আব্দুল হান্নান নামে স্থানীয় এক আড়তদার বাজারগুলোতে বগুড়া জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রির অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি চাল কল মালিকদের বিরুদ্ধে গোপনে হাজার হাজার মণ ধান মজুদের অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, ‘প্রশাসন চাইলে আমি মজুদদারদের সম্পর্কে তথ্য দিতেও প্রস্তুত আছি। আরিফ হোসেন নামে স্থানীয় এক চাল কল মালিক চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতাকে দায়ী করেন।’

তাদের বক্তব্যের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়ে বলেন, ‘কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সুগন্ধি চালের বাইরে সাধারণ মানের চাল কতটুকু কিনতে বা বাজারজাত করতে পারবে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আর মজুদ পরিস্থিতি তদারকির জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক মিল মালিককে তার উৎপাদিত চালের বস্তা কিংবা ব্যাগে মিল রেট এবং উৎপাদনের তারিখ লেখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এজন্য সংসদে পাস করা নতুন আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। ওই আইনে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন ব্যবস্থায় কোনো অপরাধ পাওয়া গেলে অপরাধীর ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা জরিমানা এমনকি জেলের বিধান রয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে খাদ্য নিয়ে অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে।’

চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনা করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য বিভাগের পরিদর্শকসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে হয় ঘাস কাটে। তারা প্রতিনিয়ত বাজার পরিদর্শন করেন না। আমাদের নির্দেশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তারা বাজারে নামেনি। তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’

তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমাদের অবহিত করতে হবে।’

দ্রব্যমূল্য না বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবার আমাদের দলের ইশতেহারেও দ্রব্যমূল্য না বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই আমাদের নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। এরই মধ্যে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছি এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর রয়েছে– আড়তদার ও মিল মালিকরা নির্ধারিত গুদামের বাইরে ধান মজুদ করছেন। যেসব অঞ্চলে ধানের আবাদ বেশি হয় সেসব এলাকাতেই গোপনে এ ধরনের গোডাউন গড়ে তোলা হয়েছে।’

সভায় কয়েকজন চালকল মালিক ব্যবসা করতে গিয়ে পথে বসার কথা জানালে মন্ত্রী তার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যেসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা কেউ ব্যবসা করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। বরং চাল কলের নামে ব্যাংক থেকে কোটি-কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সেই টাকায় ব্যবসা না করে বরং গাড়ি-বাড়ি করার কারণেই আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

তিনি চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রাসী ব্যবসার সুযোগ প্রদানের অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা যখন ক্ষতিগ্রস্ত হন তখন মিলগুলো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি নিজে চাল উৎপাদন করে তা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির সময় তাদের চাহিদা অনুযায়ী বস্তাগুলোতে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি মূল্য উল্লেখ করে সিল মারছেন।’

সভায় অন্যান্যের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন বক্তব্য দেন।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
এপ্রি ২৬, ২০২৫
temperature icon 26°C
clear sky
Humidity 65 %
Pressure 1006 mb
Wind 7 mph
Wind Gust Wind Gust: 12 mph
Clouds Clouds: 1%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 05:32
Sunset Sunset: 18:33

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top