মিরর বিনোদন : আলী হাসান ও অভিনেতা-গীতিকার মারজুক রাসেলের দ্বৈত র্যাপ গান ‘নানা নাতি’। গত ১৬ জুন আরবিটি এন্টারটেইনমেন্ট নামের একটি চ্যানেল থেকে গানটি প্রকাশ করা হয়। গানটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সোমবার (৮ জুলাই) আদালত গানটিকে ইউটিউব থেকে সরানোর নির্দেশ দেয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসে। এ গানের একটি লাইন ‘বর্তমানের কোর্টে বিচার চলে নোটে’ নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন শেরপুর জেলা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফাহিম হাসনাঈন। গানটি প্রকাশিত হওয়ার দুদিন পরই গায়ককে আইনি নোটিশ পাঠান তিনি। নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে ‘বর্তমানের কোর্টে বিচার চলে নোটে’ লাইনটি বাদ দেয়াসহ অনলাইনে লাইভে এসে জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও বলা হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে গানটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে একটি রুলও জারি করেন আদালত।
‘নানা-নাতি’ গানে আছে কী?
সকালে হাটতে বেরিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ান নাতি। পায়ের নিচে কিছু একটা পড়েছে তার। এরপরই দেখা যায় সেটা কুকুরের মল। কুকুরটির নাম স্পার্কি। একটা মেয়ে কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছেন।
এরমধ্যে সেখানে হাজির হন নানা। তিনিও সকালে হাটতে বেরিয়েছেন। শুরু হয় নানা-নাতির আলাপ। গানের লিরিক্সে র্যাপের ছন্দে দুজনের কথাবার্তায় ফুটে ওঠে জেনারেশন গ্যাপের বিষয়টি। আগেকার দিনগুলোর সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে বর্তমান সময় এবং প্রজন্মকে খোঁচা মারা হয়েছে গানে। আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা নিয়ে মজা করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নানা-নাতি গল্পের এই গানে।
নানা বলেন, আগের সেই দিন আর নাই। খেলাধুলাও বদলে গেছে। আগে লজ্জাশরম ছিলো। মানুষ ছিল পর্দাশীল। নাতি বলেন, এখন পুরো অশ্লীল। যতো বেশি গোমটা তত বেশি পোংটা (দুষ্টু)।
বর্তমান সময়ে অসংগতির কথা বলতে গিয়ে নাতি উদাহরণ হিসেবে বলেন, এক টাকা দিয়ে পানি খেয়ে পাঁচ টাকা দিয়ে পেশাব করে মানুষ।
এরপরই আসে গানের সবচেয়ে বিতর্কিত লাইনটি। নাতি বলেন, ‘স্বার্থ শেষ হু… নিচে লাত্থি মাইরা ফোটে। বর্তমানের কোর্টে নানা বিচার চলে নোটে।’
নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে নানা বলেন, বাবারা নামাজ পড়ে ভোরে ক্ষেতে যেতেন আর ছেলে-মেয়েরা যেত মক্তবে, মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করতেন। মাইলের পর মাইল হেটে গঞ্জের হাটে যেতেন তারা। ব্যাগ বোঝাই বাজার নিয়ে আবার হেঁটে হেঁটে ফিরে আসতেন।
নাতি বলেন, আপনারাই ভালো ছিলেন। আমরাই পড়েছি বাটে (বিপদে)। এখন ছেলেরা শুধু সুন্দরী খোঁজে। সারাক্ষণ ফোনে পাবজি গেমস খেলে আর চ্যাট করে। পড়াশুনা না করে পার্কে ডেট করে বেড়ায়। যেখানে সেখানে রেস্টুরেন্ট আর ভিআইপি ফ্লাট থাকলেও এই শহরে খেলার মাঠ নাই। আর মসজিদে বাচ্চাদের নিয়ে গেলে মুরুব্বিরাও রাগ করেন।
আগেকার সময়ের ভেজালমুক্ত খাবারের কথা বলেন নানা। এসময় নাতি তাকে হোটেলে নাস্তা করানোর অফার দেন। নানা বলেন, নাতিবউ কি করছে? সকালে ঘুম থেকে উঠেনি?
নাতি বলেন, তার ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেলা ১২টা বেজে যায়। আপনাদের সালমা সুখ পেয়ে আল্লাহর নাম ভুলে গেছে, তাই ঘুমায়। ব্লেন্ডার মেশিনে মসলা বাটতেও কষ্ট হয়। আবার নেচে নেচে হিন্দি গানের সঙ্গে টিকটক করে।
নানা বলেন, আমাদের মা-খালারা সাজ সকালে ঘুম থেকে উঠতো। হাস-মুরগি-গরু-ছাগল কতকিছু পালতো।
নানার সঙ্গে নাতি আরো যোগ করেন, ঘরদোর পরিষ্কার করতো। পুকুর ঘাটে গোসল করতো, টিউবওয়েল চেপে পানি নিতো, পাটায় মশলা বাটতো, লাকড়ির চুলায় রান্না-বান্না করতো।
স্মৃতিকাতর হয়ে নানা বলেন, খাবারের যে কত স্বাদ ছিল! আঙুল চেটে খেতাম।
নাতি বলেন, সেই যুগ ভুলে যান নানা। খাবার দাবারে কেমিক্যাল ভর্তি, তাই আমাদের রোগবালাইও বেশি।
নাতি বলতে থাকেন, এখন সবাই আমানতের খেয়ানত করে। খারাপ লোকেরা ভালো মানুষের খুঁত ধরে। চারদিকে ভরে গেছে হারাম সুদ। আমরা শুধু পাইছি মোবাইল, ইন্টারনেট আর বিদ্যুৎ। প্রযুক্তি আমাদের সুখ কেড়ে নিয়ে গেছে। নিমখহারাম ভুলে যায় কী ছিলো আগে।
গানের শেষে নানা চলে যান। নাতি বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে থাকেন। দুই বছর আগে ‘ব্যবসা পরিস্থিতি’ শিরোনামে একটি গান গেয়ে পরিচিতি পান আলী হাসান। সবশেষ কোক স্টুডিও বাংলায় ‘মা লো মা’ গানের মাধ্যমে ফের আলোচনায় আসেন। কিন্তু এই গানের পর ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে বেশ সমালোচিত হন এই র্যাপার। এর মধ্যেই গত ১৬ জুন রাতে প্রকাশ করেন ‘নানা নাতি’। গানটি লিখেছেন আলী হাসান নিজেই। গেছেন আলী হাসান ও মারজুক রাসেল।