মিরর ডেস্ক : রমজান বা রামাদান (আরবি: رمضان রামাদ্বান্; ফার্সি: رمضان রমযান) ইসলামি বর্ষপঞ্জির ৯ম মাস এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর নিকট সবচেয়ে পবিত্রতম মাস এটি। এই মাসে ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট অবতীর্ণ হয়।
এই রমজান মাসে মসলিম উম্মাহ ভোর থেকে সুর্যাস্তের পর পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌনক্রিয়াদি বর্জন করে থাকেন। একে আরবিতে ‘সিয়াম’ বলে; বাংলাদেশে যা মুলতঃ ‘রোজা’ বলে পরিচিত। আরবি হিজরি সনের ১২টি মাসের মধ্যে শুধুমাত্র এই রমজান মাসের নাম পবিত্র কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র এই রমজান মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়, তেমনি সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে পবিত্র রমজান মাসের রহমতের প্রথম ১০ দিন। মাগফিরাতের দশকও শেষ প্রান্তে। কড়া নাড়ছে নাজাতের শেষ ১০ দিন।
হাদিসে এসেছে, যারা মর্যাদার মাস রমজান পেলো কিন্তু নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না, তাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের পাশাপাশি কী কী আমল করতে পারেন, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ। সেই পোস্টে তিনি নবীজি (সা.) এর রমজানের শেষ দশকের আমলগুলো যেমন বলেছেন, তেমনি শেষ দশকে ইতিকাফ ও লাইলাতুল কদরের গুরুত্বও তুলে ধরেছেন।
পোস্টে শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, ইবাদতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো আমাদের দোরগোড়ায় উপস্থিত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে জীবনের সবচেয়ে বেশি ইবাদতে মগ্ন হতেন। ইতেকাফ এই দশকের শ্রেষ্ঠ ইবাদত। দ্বিতীয় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নবীজি (সা.) কখনো ইতেকাফ ত্যাগ করেননি।
তিনি আরো লিখেছেন, ইতেকাফ অনেকটা দাবি আদায়ের জন্য কারো চৌকাঠে বসে যাওয়ার মতো ব্যাপার। দুনিয়ার সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে কাঁথা-বালিশ নিয়ে আল্লাহর ঘরে বসে যাওয়ার নাম ইতেকাফ। ইতেকাফের আবেদন অনেকটা এমন- যেন ক্ষমা না নিয়ে ঘরে ফিরবো না। ইতেকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরে ইবাদতের পথ সবচেয়ে সহজ হয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, যে ইবাদত নবীজি (সা.) জীবনে একবারও বাদ দেননি, সেই ইবাদত আমরা অনেকে জীবনে একবারও করতে পারিনি। অথচ ইতেকাফ এমন একটি ইবাদত যার তৃপ্তি মানুষকে বারবার ইতেকাফ করতে উৎসাহিত করে। যে আল্লাহ বছরে ৩৬৫টি দিন দিলেন, সেই আল্লাহর জন্য আমরা কি ১০টা দিন উৎসর্গ করতে পারি না! আসুন, আমরা ইতেকাফের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি’।
এরপর সেই পোস্টে রমজানের শেষ দশকের বেশকিছু কাজ তুলে ধরেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি লিখেছেন, রমজানের শেষ দশকে প্রিয় নবী (সা.) ৬টি কাজ করতেন। সেগুলো হলো-
১. ইতেকাফ।
২. জীবনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ইবাদত সাধনায় রত থাকা।
৩. রাত্রি জাগরণ।
৪. পরিবারকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা।
৫. কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হওয়া।
৬. লাইলাতুল কদর তালাশের আশায় শেষ ১০ রাতে (বিশেষত বেজোড় রাতগুলোতে) ইবাদত করা।
আল্লাহ আমাদের ও আমাদের পরিবারকে হক আদায় করে রমজানের শেষ দশকে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।