৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

ন্যায়পরায়ণ শাসক আল্লাহর কাছে যে পুরস্কার পাবেন

শাসন ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দেওয়া এক অনুগ্রহ। আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা শাসন ক্ষমতা দান করেন, আবার যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِکَ الۡمُلۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِکَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ 

‘বোলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন করো। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা আলে ইমরান, (৩), আয়াত, ২৬)

ক্ষমতা আল্লাহর দান

তাই কেউ শাসন ক্ষমতা বা কোনো দায়িত্ব পেলে অহংকার বা বড়াই করার কিছু নেই। বরং তা আমানতদারিতার সঙ্গে পালন করা উচিত এবং যার যা প্রাপ্য তাকে তা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারো ওপর নির্যাতন করা মোটেও ঠিক হবে না। কারণ ক্ষমতার অপব্যবহার করলে পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতা করতে হবে এবং কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

প্রতিশ্রুতি পূরণের গুরুত্ব

এর বিপরীতে ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে পরকালে রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهۡلِهَا ۙ وَ اِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُکُمۡ بِهٖ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرً

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে ফিরিয়ে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা। (সূরা নিসা, (৪), আয়াত, ৫৮)

অর্থাৎ, যার দায়িত্বে কোনো আমানত থাকবে, সে আমানত প্রাপককে পৌছে দেওয়া তার একান্ত কর্তব্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানত যথাযথভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এমন খুব কম হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ভাষণ দিয়েছেন অথচ তাতে একথা বলেননি – ‘যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার মধ্যে ঈমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার দ্বীন নেই’। (মুসনাদে আহমাদ, ৩/১৩৫)

তাছাড়া আমানতদারী না থাকা মুনাফেকীর একটি আলামত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মুনাফেকীর লক্ষণসমূহ বর্ণনা প্রসঙ্গে একটি লক্ষণ এটাও বলেছিলেন যে, যখন তার কাছে কোন আমানত রাখা হয় তখন সে তাতে খেয়ানত করে। (বুখারি, হাদিস, ৩৩; মুসলিম, হাদিস, ৫৯)

কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতের মাধ্যমে আমানতের সঙ্গে সঙ্গে শাসকদেরকে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার এবং সুবিচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি হাদিসে এসেছে যে, ‘বিচারক যতক্ষণ পর্যন্ত জুলুম করে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার সাথে থাকেন। এরপর সে যখন জুলুম শুরু করে দেয়, তখন আল্লাহ তাকে তার নিজের উপর ছেড়ে দেন।’ (ইবনে মাজা)

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, শাসনকর্তৃপক্ষের উপর ওয়াজিব হলো, আল্লাহর আইন অনুসারে বিচার করা, আমানত আদায় করা। যদি তারা সেটা করে তবে জনগনের উপর কর্তব্য হবে তার কথা শোনা, আনুগত্য করা, তার আহবানে সাড়া দেয়া। (তাবারী)

ন্যায়পরায়ণ শাসকের পুরস্কার

কোনো শাসক ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করলে তার জন্য পরকালে বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। কেয়ামতের দিন যখন সবাই দিক-বিদ্বিক হয়ে ঘুরে বেড়াবেন তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‍ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তার (আরশের) ছায়া দান করবেন— যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না;

>>এক. ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা)।

>> দুই. এমন যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়।

>>তিন. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)

>> চার. ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়।

>>পাঁচ. সেই ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’

>>ছয়. সেই ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে, তা তার বাম হাতও জানতে পারে না।

>> সাত. যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’

(বুখারি, হাদিস : ১৪২৩; মুসলিম, হাদিস : ১০৩১; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯১; নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৮০, আহমদ, হাদিস : মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৭৭৭)

⠀শেয়ার করুন

⠀চলমান

loader-image
Dinājpur, BD
নভে ৮, ২০২৪
temperature icon 20°C
clear sky
Humidity 83 %
Pressure 1015 mb
Wind 6 mph
Wind Gust Wind Gust: 12 mph
Clouds Clouds: 0%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:18
Sunset Sunset: 17:20

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top