মজিবর রহমান, ঢাকা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা ভোট উৎসবের। আগামীকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হচ্ছে ভোটযুদ্ধ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ খোলা রাখায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ সব মিলিয়ে ২৮টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী এবার ভোটে অংশ নিচ্ছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন ঘটেনি।নির্বাচন ঘিরে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির জন্য ইসি ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আজ শনিবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হলেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিগত দিনে ভোটের দিন যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও এবার গণপরিবহন চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। ফলে যাতায়াতের সুবিধার কারণে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করাই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেয়া দরকার, এর সবই নেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ব্যালট পেপারও পাঠানো হয়েছে। শেষ সময়ের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের দুর্বলতা বা ত্রুটি না থাকে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটদান করতে পারবেন বলে আশা করি।’
ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন স্থগিত করায় রবিবার ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আগের রাতে কারচুপি রোধ করতে এবারই প্রথম প্রথম বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার যাচ্ছে। আগামীকাল ভোটের দিন সকালে ৯৩ শতাংশ কেন্দ্রে, অর্থাৎ ৩৯ হাজার ৬১টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। আর ৭ শতাংশ কেন্দ্রে, অর্থাৎ দুই হাজার ৯৬৪ কেন্দ্রে শনিবার ব্যালট পেপার পৌঁছাবে। দুর্গম এলাকাগুলোতে আজ শনিবার ব্যালট পেপার পৌঁছাবে। কোথাও কোথাও হেলিকপ্টারে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।
এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১৪৮টি এবং ভোটকক্ষ দুই লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি। এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে ৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাকে (প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রিজাইডিং অফিসার চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন এবং পোলিং অফিসার পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন রয়েছেন।
এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন, যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৯৭, নারী ভোটারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন। এবার নারীর চেয়ে ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৩০৮ পুরুষ ভোটার বেশি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরুষ ভোটার ছিল পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার ছিল পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন। নারীর চেয়ে সে সময় ৯ লাখ ছয় হাজার ৫৩ জন পুরুষ ভোটার বেশি ছিল।