ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ইমেইল করার অভিযোগে সৌদি প্রবাসী ও দেশটির যুবদলের একাংশের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন।
সিটিটিসি বলছে, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিকালে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় পাঠানো ইমেইলে গুলি করে হত্যার নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের মেইল ঠিকানায় ইমেইল করে তারা।
সংস্থাটি আরও বলছে, রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারার অংশ হিসেবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া পাবলিক রিলেশন সেন্টারের ইমেইলে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিকালে রিয়েলমি৫৫ কেএসএ জিমেইল থেকে একটি হুমকি বার্তা সম্বলিত ইমেইল আসে। মেইলের সাবজেক্ট লাইনে ‘২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষমতা নেই এই হামলা ঠেকানোর। মহারণের সাক্ষী হবে ২৭ এপ্রিল’ এবং ইমেইলের বডিতে একই হুমকির বার্তা লেখা ছিল।
বিষয়টি সিটিটিসির প্রধান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। হুমকির বিষয়টি জানানো হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশে ছিলেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে বিদেশ সফরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অফিসিয়াল ইমেইলে realmec55ksa@gmail.com হতে ইংরেজিতে একটি হুমকি বার্তা সম্বলিত ইমেইল আসে। হুমকির বার্তায় বলা হয়, ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোর ৪টায় গুলি করা হবে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানানো হয়। বিদেশ সফরকালেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
ওই ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত ও সৌদি আরবে থাকা রাষ্ট্রদূত ও সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মাধ্যমে সৌদি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা হয়। এরপর দুই জনকে শনাক্ত করে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশে পাঠানো হলে তাদের গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি চৌকস টিম গোপন অনুসন্ধান এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শেষে ইমেইল বার্তা প্রেরণকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং হুমকি দেওয়া ব্যক্তির নাম দীন ইসলাম বাদল বলে নিশ্চিত হয়। হুমকি প্রদানকারীর ইন্টারনেট(IP) অ্যাকটিভিটি পর্যালোচনা করে তার অবস্থান সৌদি আরবে বলে নিশ্চিত হয় তদন্ত টিম।
একই ঘটনায় ২০ এপ্রিল ডিএমপি মিডিয়া পাবলিক রিলেশন সেন্টারের ইমেইলে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতাসহ অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলা করে সিটিটিসি। মামলা নং-১৫।
একই তারিখে মামলার আসামি এবং সহযোগীদের সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর এনসিবি-ইন্টারপোল এর মাধ্যমে এবং একইসঙ্গে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেল ব্যবহার করে কার্যক্রম গ্রহণ করে সিটিটিসি।
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর তদন্ত শেষে সৌদি সরকার গত ২৯ জানুয়ারি দীন ইসলাম ও সহযোগী কবির হোসেনকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১০ বছর ধরে সৌদিতে থাকা কবির হোসেন সৌদি যুবদলের একাংশের সভাপতি। আর সৌদি যুবদলের নেতা দীন ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ ২৭ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যে কারণে এই হুমকিকেও গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বা হামলা করা হলে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের সঙ্গে আর কারো যোগসাজশ ছিল কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।