১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

মাটির উর্বরতা কমায় কৃষি খরচ বাড়ছে

ঢাকা : বাংলাদেশের কৃষি খাত একটি ক্রমবর্ধমান সংকটের সম্মুখীন, যেখানে মাটির উর্বরতা হ্রাস, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। জমির উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষতা কমে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। এর ফলে কৃষি পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য আরও বড় চাপ তৈরি করছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ‘বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনশীলতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ‍্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইডিএসের চার দিনব‍্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনে গবেষণাটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা ফেলো তাজনূর সামিনা খানম।

গবেষণাটি দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতার প্রবণতা, কৃষকদের সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলানো বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে আলোকপাত করেছে। এ ছাড়া গবেষণার ফলগুলো বাংলাদেশের কৃষি খাতের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে জমির উৎপাদনশীলতার হ্রাস, উৎপাদন খরচের বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার কমে যাওয়া। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, গবেষণাটি টেকসই উন্নতির পথ দেখিয়েছে, যেখানে উৎস শক্তি দক্ষ প্রযুক্তির ব্যবহার, মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং উন্নত সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিকভাবে উন্নতি সম্ভব।

গবেষণার ফলাফলে ছোট কৃষকদের সমর্থন, পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় টার্গেটেড নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সঠিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাত এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। যা খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।

গবেষণায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জমির উৎপাদনশীলতার উল্লেখযোগ্য হ্রাস পাওয়া যায়। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জমির উৎপাদনশীলতা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়ে ২০১১-২০২০ সালে মাইনাস শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ২০১২-২০২১ সালে মাইনাস শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ হয়ে যায়। এই হ্রাসের পেছনে মাটি অবক্ষয় এবং অসমর্থ কৃষি চর্চার কারণে এটি ঘটেছে।

শ্রম উৎপাদনশীলতা, যা প্রতি শ্রমিকের উৎপাদন পরিমাপ করে, ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শক্তিশালী বৃদ্ধি দেখিয়েছে (৪.৪৮%)। তবে, এর পরবর্তী সময়ে এই প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ২০১১-২০২০ সাল পর্যন্ত এটি ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০১২-২০২১ সাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। যা শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

মোট উৎপাদনশীলতা, যা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত সম্মিলিত উপাদানের সঙ্গে মোট উৎপাদন তুলনা করে, ১৯৯০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ গড়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তবে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে টিএফপি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল এবং ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এটি হ্রাস পায়। যা অধিক উপাদান ব্যবহারের পরও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়নি।

ধান উৎপাদনের খরচ ধীরে ধীরে বেড়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উৎপাদন খরচ ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ ধানের দাম ১ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। এই ব্যবধানটি কৃষকদের লাভের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, যা তাদের জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

গবেষণা অনুযায়ী খামারগুলোর গড় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ৭৬ শতাংশ। যেসব খামারে ভালো সম্পদ, বড় আকার এবং উন্নত সংযোগ রয়েছে, তারা আরও বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে। তবে, জমির খণ্ডীকরণ, যা প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক ছিল। ২০১৫ সালের পর একটি নেতিবাচক উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা হ্রাস করেছে।

ভূগর্ভস্থ পানি সেচ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দীর্ঘমেয়াদিভাবে অস্থিতিশীল, এবং পৃষ্ঠজল সেচ ব্যবস্থা কম কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এটি পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর কৌশল : প্রিসিশন কৃষি, উন্নত সেচ প্রযুক্তি এবং উন্নত বীজ প্রযুক্তির ব্যবহারে সম্পদ ব্যবহারের অপ্টিমাইজেশন করা যেতে পারে।

নিয়মিত মাটি পরীক্ষণ, জৈব সার এবং ফসল ঘুরিয়ে চাষের পদ্ধতি মাটির উর্বরতা পুনরুদ্ধারে এবং জমির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। কৃষক মুনাফা বাড়াতে, এটি অত্যন্ত জরুরি যে ইনপুটের মূল্য স্থিতিশীল রাখা, ব্যয়বহুল সিনথেটিক ইনপুটের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং কৃষির মানোন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদান করা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে কৃষকদের জন্য জলবায়ু স্মার্ট কৃষি পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। সরকারকে ছোট কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ, ভর্তুকি এবং সম্মিলিত চাষের মডেলগুলোর সমর্থন প্রদান করতে হবে, যাতে সমতার সঙ্গে দক্ষতা নিশ্চিত করা যায়।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
জানু ১৩, ২০২৫
temperature icon 20°C
clear sky
Humidity 41 %
Pressure 1014 mb
Wind 5 mph
Wind Gust Wind Gust: 5 mph
Clouds Clouds: 0%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:53
Sunset Sunset: 17:34

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top