১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

১১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরে রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়ন

অর্থনীতি রিপোর্ট : বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় নতুন বেশকিছু পণ্য সংযোজন করে ২০২৪-২০২৭ মেয়াদের নতুন রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালায় ২০২৭ সালে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। খুব শিগগির এই নীতিমালা অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধি কৌশল অনুসরণ করে থাকে। রপ্তানি নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুষ্ঠু ভারসাম্য আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। রপ্তানি বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের স্থান সৃদৃঢ় করাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে রপ্তানি নীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রপ্তানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ এর মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, রপ্তানি ও অর্থনৈতিক খাতে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত সুবিধা হারাবে। বিশেষ করে, ২০২৯ সালের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ‘এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)’ স্কিম সুবিধা হারাবে। এর ফলে গড়ে ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে এই বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে হবে, যা অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে চ্যলেঞ্জের মুখে ফেলবে। এছাড়া, কঠোর রুলস অব অরিজিন প্রতিপালন, ডব্লিউটিও’র বিভিন্ন চুক্তির আওতায় দেওয়া স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল (এসঅ্যান্ডডি) ট্রিটমেন্ট সীমিত হওয়া, নোটিফিকেশন সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা, কঠোর কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ড প্রতিপালন, সরকার কর্তৃক রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ, শ্রম অধিকার সুরক্ষা বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা আরোপিত হবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ শেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জসমূহ গুরুত্বসহকারে রপ্তানি নীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এ বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গৃহীত লক্ষ্যসমূহের সঙ্গে রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ কে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য রপ্তানি পণ্য ও সেবা বহুমূখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ, সব রপ্তানি খাতে সুষম নীতি সুবিধা দেওয়া, সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং শিল্প উৎপদনমুখী রপ্তানিতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংকস, বিগ ডাটা, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করে রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের (এমএসএমই) ভূমিকা প্রনিধানযোগ্য। এমএসএমই শ্রমনিবিড়, স্বল্প পুঁজিনির্ভর ও উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেবা খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ প্রস্তাবনার উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রথম অধ্যায়ে ‘রপ্তানি নীতি (২০২৪-২০২৭) প্রণয়নের প্রেক্ষাপটগুলো’ সন্নিবেশ করে রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ প্রণয়নের ভিত্তি রচনা করা হয়েছে। রপ্তানি নীতি প্রণয়নের প্রেক্ষাপটগুলো হলো—
(ক) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ
(খ) কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
(গ) দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত রূপকল্প
(ঘ) চতুর্থ শিল্প বিপ্লব,দক্ষতা উন্নয়ন ও মেধাস্বত্ব অধিকার সংরক্ষণ
(ঙ) অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) উদ্যেক্তাদের সহায়তা
(চ) রপ্তানি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
(ছ) পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও বৃত্তাকার অর্থনীতি কৌশল গ্রহণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রপ্তানিতে সম্পৃক্ত করার সুনির্দিষ্ট নীতি সুপারিশ করা হয়েছে। ডব্লিউটিও’র এর বিধি-বিধান অনুসরণ করে রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২০২৭ মেয়াদের শেষ বছরে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে সম্ভবনাময় নতুন কিছু পণ্য ও সেবা যেমন: সবজি, হস্ত ও কারু পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সেবা খাত ও বিশেষ উন্নয়নমূলক সেবা খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রপ্তানি  সম্প্রসারণে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। খাতভিত্তিক কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। ওষুধ শিল্প ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হস্তশিল্পজাত পণ্যকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেবা খাতের রপ্তানি সম্প্রসারণে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে।

এছাড়াও নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা এবং শর্তসাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য তালিকা হালনাগাদ ও এইচএস কোডের হেডিং উল্লেখ করা হয়েছে। রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, পরীবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি এবং রপ্তানি সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি সংযোজন করা হয়েছে।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবিত রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
জানু ১৫, ২০২৫
temperature icon 18°C
broken clouds
Humidity 45 %
Pressure 1018 mb
Wind 5 mph
Wind Gust Wind Gust: 5 mph
Clouds Clouds: 82%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:53
Sunset Sunset: 17:35

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top