স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সর্বনিম্ন তামমাত্রা এখন দিনাজপুরে। শনিবার সকাল ৯ টায় দিনাজপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনাজপুরের উপর দিয়ে বর্তমানে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈতপ্রবাহ। প্রচন্ড শীতের কারনে জরুরি ভাবে ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে তারবার্তা পাঠানো হয়েছে।
গত কয়েকদিন দিনাজপুরে সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো। দিনাজপুরে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বিপর্যস্ত এ জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। উষ্ণতার আশায় কেউবা আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন আবার কেউ ভিড় জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে। সন্ধ্যার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। রাস্তাঘাটে কমে যায় যানবাহনও।
ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়েছে গবাদীপশুগুলো। এসব গাবাদীপশু নিয়ে বিপাকে খামারিসহ কৃষকরা। আবার এই কুয়াশার কারণে আলু চাষে লেট ব্রাইট রোগ দেখা দিয়েছে। ঘনকুয়াশায় বীজতলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক।
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, শনিবার ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস দেশের সর্বনিম্ন তাপামাত্রা দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ১১ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি ও ১২ জানুয়ারি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শনিবার বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। আগামী কয়েকদিনে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
শনিবার সকালে মানুষ বিক্রির হাট হিসেবে পরিচিত শহরের ষষ্টীতলার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকের খুব একটা ভীড় নেই। শীতের কারণে অনেকেই কাজে আসতে পারেন নাই। আবুল কাসেম নামে একজন বলেন, এখানে প্রতিদিন কম পক্ষে ১ হাজার শ্রমিকের সমাগম ঘটে। কিন্তু গত ৫ দিন ধরে শীতের কারণে শ্রমিকরা আসতে পারছেন না। শনিবার এতো বেশি শীত যে, ১শ’ জন শ্রমিকও আসতে পারেন নাই। কাজও নেই। কাজের সন্ধানে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলা মোড়ে এসেছেন দিনমজুর আব্দুর রহিম। তিনি জানান, শীতের সকালে গত দুই দিন ধরে এখানে বসে থেকে চলে যাচ্ছি, কাজ পাচ্ছি না। কনকনে ঠান্ডায় কাজ না পেয়ে তাই আজকেও ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে। ঠান্ডার কারণে অনেকে কাজও করাতে চায় না।
সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকার লুৎফর রহমান নামে এক কৃষক জানান, শীতের কারণে বোরো বীজতলা কুকড়ে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই শীত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। বিরল উপজেলার তেঘরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি বিঘা মাটিতে আলু চাষ করেছেন। শীত ও কুয়ামার কারণে আলুর গাছে নানা ধরণের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। তাই প্রতিদিন ভিটামিন স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে করে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর রেল ষ্টেশনে থাকেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা মাসুমা। শীতের কারণে তার জবুথমু অবস্থা। সকাল ১১ টার সময় পুরাতন শীতের কাপড় জড়িয়ে রোদের অপেক্ষায় তিনি বসে আছেন। কিন্তু সূর্য্যের দেখা মিলছে না। তিনি বলেন, প্রত্যেক বার শীতবস্ত্র পেলেও, এবার এখনো শীতবস্ত্র পান নাই। শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে আব্বাস আলী বলেন, কয়েক দিন থেকে ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীত বেশি হওয়ায় সকাল ও সন্ধ্যায় রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যায়। রাতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
অটোচালক ফারুক জানান, কনকনে শীতের কারণে মানুষ বেশির ভাগ কাজ বন্ধ রেখেছে। বাড়ির বাইরে প্রয়োজন ছাড়া বের হয় না, তাই ভাড়া পাওয়া যায় না।
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে মোট ৬২ হাজার শীতবস্ত্র ভাগ করে বিতরণের জন্য প্রত্যেকটি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এই শীতবস্ত্রগুলো বিতরণ প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে আরো ২০ হাজার শীতবন্ত্র চেয়ে মন্ত্রনালয়ে তারবার্তা পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় খুব দ্রুতই এই শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা: এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগী আসছে। তবে সেটা স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য বিভাগের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতাল, দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসাপাতাল ও অরবিন্দু শিশু হাসাপাতালে খবর নিয়ে জানা যায়, রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে।