২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

ট্রানজিট তো অলরেডি দেওয়া আছে, ক্ষতিটা কী হচ্ছে?

মিরর ডেস্ক : ভারতকে ট্রানজিট দিলে কী ক্ষতি হবে সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ট্রানজিট তো অলরেডি দেওয়া আছে। ত্রিপুরা থেকে বাস ঢাকা হয়ে কলকাতা যাচ্ছে। সেখানে ক্ষতিটা কী হচ্ছে? বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে দেশের মানুষ। আমরা কিছু অর্থ উপার্জন করছি। আসামের রুমালীগড় হয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুর ডিপোতে তেল আসছে। সেটা নাটোর পর্যন্ত আনবো। ক্ষতিটা কী হয়েছে? বরং আমরা তেলটা সস্তায় কিনতে পারছি।

বুধবার (৩ জুলাই) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় এবং বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ কেন বিচ্ছিন্ন থাকবে এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত একটি রাস্তা যাচ্ছে। সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। বিশ্বব্যাপী রোড হচ্ছে, সেটা থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। কেন বিচ্ছিন্ন থাকবো? ভারত চাচ্ছিল এ রাস্তাটি ভুটান থেকে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাবে। এটা হলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে কতো সুবিধা হতো! সেটাও খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছিল। আমরা চারদিকে বন্ধ হয়ে থাকবো, এই হল তাদের (বিএনপির) অবস্থা।

তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দরজা বন্ধ রাখতে পারি না। আমরা সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নেপাল, ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট পেয়েছি ভারতের। এটা একটা দেশ না। এটা আঞ্চলিক ট্রানজিট ও যোগাযোগ সুবিধার জন্য করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এত বেশি কথা হচ্ছে, তাই আমাদের এই কথাগুলো বলা উচিত।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। আজ পৃথিবীটা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসা-বাণিজ্য যোগাযোগের দরজা বন্ধ করে থাকা যায় না। কী সর্বনাশ করেছে দেশের! মিয়ানমারের গ্যাসক্ষেত্রে ভারত, চীন ও জাপানের বিনিয়োগ ছিল। ওই গ্যাসটা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত নিয়ে যাবে, নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা একটা ভাগ নেবো। এটা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসের কোনও অভাব হতো না। খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। কেন দেয়নি? আজ সেই গ্যাস নিয়ে গেছে চীন। আর কোনও দেশ তো নিতে পারছে না। অথচ আমরা সেটা থেকে পেতাম। আমি সরকারে আসার পর অনেক চেষ্টা করেছিলাম একটু গ্যাস আনতে পারি কিনা? কিন্তু পারলাম না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ মিলে প্রতিটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা…। সেখানে ট্রানজিটের ব্যবস্থা…। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ কেনা শুরু করছি। গ্রিড লাইন করা… আমরা সেই চুক্তিও করেছি এবং কার্যকরও করছি।

তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে বন্ধ হওয়া রেললাইন, সড়ক ও নৌপথ বন্ধ ছিল। আমরা সেগুলো চালু করে দিচ্ছি।

খালেদা-এরশাদ-জিয়া দেশ বিক্রি করেছে

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আমার ভারত সফর নিয়ে নানান রকম কথা তুলেছে। ১৯৮১ সালে ছয় বছর পরে দেশে ফিরে আসার পর তখন এই একই কথা শুনতে হয়েছে (ভারতের কাছে দেশ বিক্রি)। এখন জানি না কেন সেই ভাঙা রেকর্ড বাজাতে শুরু করলো।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ ‍উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে ভোট বেশি পেলেও ২০০১ সালে সিট বেশি পাইনি। এজন্য সরকার গঠন করতে পারলাম না। কারণ আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। তো বিক্রিটা করে কে দেশকে? করে গেছে তো খালেদা জিয়া, করেছে এরশাদ সাহেব। করেছে জিয়াউর রহমান। এরাই করে গেছে, আওয়ামী লীগ করে না।

দেশ বিক্রি কারা করে সেটা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাজারটাকে ভারতীয় পণ্যের বাজারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ৪০টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশ অধিকার দিয়ে দেয়। ১৯৮০ সালে গ্যাস বিক্রির চুক্তিও করে আসে। ১৯৯২ সালে ভারতে গেলো খালেদা জিয়া। সেখানে যৌথ ইশতেহার ঘোষণার ১১ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে ভারতে অনুপ্রবেশ করার কথা স্বীকার করে নেয়। তারপরে পুশইন শুরু হয়েছিল। সেখানে আমাদের বহু মানুষ কষ্ট পেয়েছিল। এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের জন্য আমরা সংসদে দাবিও করেছিলাম, কিন্তু কর্ণপাত করা হয়নি।

এসময় সরকারপ্রধান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কার ভারত সফরে দেশের জন্য কোনও কিছুই আনতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে দলগুলোর কূটনৈতিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন।

আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ভারত-বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিচুক্তি, ছিটমহল বিনিময়, তিন বিঘা করিডোর উন্মুক্তসহ সরকারের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও জিয়াউর রহমান কেউ তো এ সমাধানটা করতে পারেনি, করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল এরশাদও ভারতে গিয়েছিল। কী এনেছিল বাংলাদেশের জন্য? কিছুই না। পারলে সব দিয়ে আসে। হাঁটু ধরে বসেছিল।

কারও মুখ চেপে ধরছি না, গলা চিপেও ধরছি না

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। এতদিন তো গণতন্ত্র সেনানিবাসে বন্দি ছিল। সারা রাত হতো কারফিউ। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরেই গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের হাতে ফিরে এসেছে। জনগণ আমাদের ভোট দিচ্ছে, আমরা জয়ী হচ্ছি। অত্যাচার-নির্যাতনের কথা শুনি। আমাদের কোনও নেতাকর্মী বাকি ছিল নির্যাতনের হাত থেকে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে?

তিনি বলেন, সবাই কথা বলছে, জনসভা করছে, মিছিল করছে, বক্তৃতা করছে। আমরা রেডিও, টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি বেসরকারিভাবে। ইচ্ছামতো টকশো করছি। আমরা তো কারও মুখ চেপে ধরছি না, গলা চিপেও ধরছি না। যে যা পারছে, বলতে পারে বলুক। আমরা রাষ্ট্র চালাচ্ছি, জনগণের কল্যাণে কাজ করছি।

সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে অনেক দোষ দেয়

আমলাদের নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে অনেক দোষ দেয়। কিন্তু আমি দেখেছি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সময়ে যারা একেবারে তরুণ (কর্মকর্তা), তাদের ভেতরে যে আন্তরিকতা, তাদের কাজ করার যে আগ্রহ, সেটা সত্যিই আমাকে আশার আলো দেখায়। সবাই মন-প্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করেছে। এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ ধরনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী তো দরকার। এ ধরনের অফিসার তো আমাদের দরকার।

নতুন ঘর পেয়ে যাতে নতুন বউ না আনে

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন ৫৮টি জেলার ৪৬৪টি জেলায় কোনও ভূমিহীন, গৃহহীন নেই।

ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘর স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এটা যৌথ নামে করা হয়। এখানে যদি দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে স্ত্রী পাবে, স্বামী নয়। এর পেছনেও একটা যুক্তি আছে, না বলে পারছি না। যার ঘরবাড়ি ছিল না, রাস্তায় পড়ে থাকতো। তাকে আমি একটা ঘর দিলাম, নতুন ঘর পেয়ে যদি নতুন বউ নিয়ে আসে, তখন কী হবে? কাজেই নারী জাতির সুরক্ষা দেওয়া এটা তো আমার দায়িত্ব। সেজন্যই আমি এ ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্প নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতার একটা বিরাট দৃষ্টান্ত। কারণ বাড়ির মালিক দুজনে সমান সমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। আমার একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অন্ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেশকে উন্নত করে দেওয়া। সেটাই আমি করতে চাই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আমরা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। আমাদের নবযাত্রায় আরও সাফল্য আসুক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বাংলাদেশের মানুষ আরও উন্নত সুন্দর জীবন পাবে।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
এপ্রি ২০, ২০২৫
temperature icon 26°C
scattered clouds
Humidity 67 %
Pressure 1006 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 7 mph
Clouds Clouds: 40%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 05:38
Sunset Sunset: 18:30

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top