খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ১৪ মণ ওজনের বিশাল আকৃতির শাহীওয়াল জাতের এক গরু। গরুটির মালিক একসময় সৌদিতে থাকতেন বলে শখ করে নাম রেখেছেন ‘যুবরাজ’।
মালিকের আশা এবার কোরবানির পশুর হাট কাঁপাবে তার ‘যুবরাজ’ নামে এ গরুটি। বিশালকারের গরুটি নিয়ে এরইমধ্যে শুরু হয়েছে মাতামাতি। বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা দেখতে আসছেন, করছেন হাকডাক। দাম ভালো পেলে ‘যুবরাজ’কে তুলে দেওয়া হবে ক্রেতার হাতে।
শুক্রবার (২৪ মে) বিকালে দিনাজপুরের খানসামার খামারপাড়া ইউনিয়নের নেউলা গ্রামের খালপাড়ায় আলহাজ আ. কুদ্দুস মাষ্টারের ছেলে সৌদি প্রবাসী মো. জাকারিয়া হাবিবের বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে এই যুবরাজের।
ইটের দেয়াল আর টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের এক পাশে ছিল বিশাল গরুটি। এরপর পাশেই আছে যুবরাজের মাসহ আরেকটি গরু। গরুটির ওজন ৫৬০ কেজি, দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রচণ্ড রোদ ও তাপ থাকায় গরুটিকে দিনের ২ বার গোসল করাতে হয়। গরুটির মাথার ওপর সব সময় ১টি ফ্যান চলে। পরিবারের লোকজন ও মালিক জাকারিয়া নিজেও যত্ন নেন।
গরু দেখতে আসা সোহরাব আলী বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে মানুষের কাছে শুনতেছি তারা একটি অনেক বড় ষাঁড় লালন-পালন করছে। সেটি দেখতে আসলাম।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, পুরো এলাকায় এরকম গরু কোথাও দেখিনি। অনেকেই গরুটি দেখতে আসছে। ক্রেতারা দর কষাকষি করেন। মাঝে মাঝে এসে গরুটিকে দেখে যাই।
গরু ব্যবসায়ী নূর উদ্দিন কালবেলাকে জানান, আমি গরুটির কথা শুনেছি। অনেক বড় এই গরুটির ওজন নাকি ১৪ মণ হবে। খুব শিগগিরই সরজমিনে গিয়ে দেখে দাম বলবো।
গরুটির মালিক জাকারিয়া হাবিব বলেন, আমরা যুবরাজকে সন্তানের মতোই বড় করেছি। শাহীওয়াল জাতের এই গরুটিকে প্রতিদিন খড়, কাঁচা ঘাস, গমের ভূসি, খৈল, চিটা গুরসহ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ানো হয়। অতিরিক্ত গরমে যাতে যুবরাজ অসুস্থ হয়ে না পড়ে সে জন্য ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ফ্যান চালানো হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় গরুটির পরিচর্যা করা হচ্ছে। বর্তমানে গো-খাদ্য দাম বেশি হওয়ায় দাম বেশি চাচ্ছি। যুবরাজকে বিক্রির জন্য ১০ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছি। তবে দামাদামি করে কম হলেও বিক্রি করে দেব।
জাকারিয়ার বাবা আলহাজ আ কুদ্দুস মাষ্টার বলেন, আমার ছেলে বিদেশে ছিল। সেখান থেকে টাকা পাঠালে একটা গাভী কিনি। সেই গভীর একটা বাছুর হয়। তার নাম রাখা হয় ‘যুবরাজ’। সেই গরুটি আমরা অনেক কষ্টে যত্ন সহকারে লালন পালন করি। আমাদের খুব শখের জিনিস। কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রি করতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, সৌদি প্রবাসী সৌখিন খামারি প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে একটি সুন্দর রোগবালাই মুক্ত বিশাল ষাঁড়টি লালন-পালন করেছেন। আমি আশা করছি কুরবানীতে তিনি ভালো দাম পাবেন। এবার উপজেলায় খামারিরা ঈদের জন্য প্রায় ১৬ হাজার গরু প্রস্তুত করেছেন। উপজেলায় ১১ হাজার গরুর চাহিদা রয়েছে। বাকি সাড়ে চার হাজার গরু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতে পারব। ভবিষ্যতে এ রকম গরু যদি কেউ পালন করতে চান তাহলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে।