কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : গ্রাহক না হলেও এক দিনমজুরের নামে ছয় মাসের বকেয়া বিল দেখিয়ে তা পরিশোধের নোটিশ দিয়েছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূরুঙ্গামারী শাখা। শুধু তাই নয়, নোটিশ পাওয়ার পর দ্রুত বিল পরিশোধ না করলে ওই দিনমজুরের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের এমন ভুতুড়ে কাণ্ডে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগী দিনমজুরসহ একাধিক ব্যক্তি।
হবির আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকেরছড়া গ্রামে। তার বাবার নাম সিরাজুল হক। পেশায় দিনমজুর হবির আলীর নামে বাড়িতে কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ বা মিটার না থাকলেও তার নামে ছয় মাসের বকেয়া বাবদ এক হাজার ৯৫১ টাকা দেখিয়ে তা পরিশোধের নোটিশ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
‘আমার নামে কোনও মিটার নাই। তবুও আমার নামে বকেয়া বিল দেখায় তা পরিশোধের নোটিশ দিয়া গেছে। কোন জামানায় পড়লাম!’ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নোটিশ পেয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান দিনমজুর হবির আলী। গত ১৮ মে পল্লী বিদ্যুতের মিটার রিডার রায়হান মিয়া ওই দিনমজুরসহ গ্রামের একাধিক ব্যক্তিকে এমন নোটিশ পৌঁছে দেন বলে ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে। নোটিশগুলো চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত।
হবির আলী বলেন, ‘আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, তবে সেটা আমার বাবার নামে। সেই সংযোগেরও কোনও বকেয়া নেই। আমরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি। তারপরও আমার নামে নোটিশ দিছে। আমার বাড়ির পাশে আরও কয়েকজনের নামে এমন নোটিশ দিছে। অফিসে গিয়ে কোনও সুরাহা পাইনি।’
হবির আলীকে দেওয়া নোটিশের কপিতে বলা হয়েছে, ‘রেকর্ডপত্র অনুযায়ী ০৯/১০/২০২১ তারিখে বকেয়ার কারণে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অফিস রেকর্ড অনুযায়ী আপনার নিকট ৬ মাসের ১ হাজার ৯৫১ টাকা বকেয়া রয়েছে। এমতাবস্থায় অত্র নোটিশ প্রাপ্তির পর অতি সত্বর বকেয়া পরিশোধ ও পুনঃসংযোগ গ্রহণ করার জন্য বলা হইলো। অন্যথায় উক্ত বকেয়া আদায়ের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ আইন ও পিডিআর অ্যাক্ট অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।’ ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি’কে মামলা করার জন্য এই নোটিশের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
একই নোটিশ স্থানীয় মুদি দোকানদার খোকনসহ কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের কারও নামেই বিদ্যুৎ সংযোগ বা মিটার রেজিস্ট্রেশন নেই। ভুক্তভোগীদের দাবি, তাদের নামে কখনও সংযোগ ছিল না।
এ ব্যাপারে নোটিশ পৌঁছে দেওয়া মিটার রিডার রায়হান মিয়া বলেন, ‘অফিস থেকে ওই নোটিশগুলো সরবরাহ করে গ্রাহক বরাবর পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। আমি শুধু পৌঁছে দিয়েছি। যাদের নামে সংযোগ ছিল না বলে দাবি করা হয়েছে তাদের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছি।’
‘বকেয়াগুলো ২০২১ সালের দেখানো হয়েছে। আমি সে সময় চাকরিতে ছিলাম না। ৬-৭ জনের নামে এমন নোটিশ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যাদের নামে কোনও সংযোগ ছিল না বলে দাবি করেছেন নোটিশপ্রাপ্তরা। আমি তাদের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছি; না হলে হয়তো তারা এমনি এমনি ঝামেলায় পড়তে পারেন।’ মিটার রিডার হয়ে সংযোগহীন ব্যক্তিদের কাছে নোটিশ পৌঁছে দেওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন রায়হান।
পল্লী বিদ্যুতের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ডিজিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই ব্যক্তিরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বিষয়টি বিলিং সহকারীকে যাচাই করতে বলেছি। নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নামে যদি সংযোগ না থেকে থাকে তাহলে এমন নোটিশ জারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’