চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ‘মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’
বৈজ্ঞানিক সভ্যতায় এখন মৌচাষ বাড়লেও মৌমাছির সেই চিরন্তন খাদ্য খোঁজার অভ্যাসটি কিন্তু বদলায়নি। মৌমাছি সম্বন্ধে আমরা খুব অল্পই জানি। মৌমাছি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন পতঙ্গ। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে এরা অভ্যস্ত। তবে এর বাইরে ঘটেছে একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে হৃদয় নামের এক যুবকের হাতে বসে হাজারো মৌমাছি।
শুক্রবার উপজেলার কসবা গ্রামে হৃদয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার এক হাতে বাসা বেঁধেছে মৌমাছি। যেন আস্ত এক মৌচাক। মৌচাক হাতে নিয়েই জীবনযাপন করছেন তিনি। বিশেষ প্রয়োজনে তা সরিয়ে রাখেন অন্য জায়গায়।
মৌমাছি দেখলেই যেখানে ভয়, এই বুঝি কামড় দিল। সেখানে প্রায় ১০ বছর ধরে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিকভাবে হওয়া মৌচাকের মধু সংগ্রহ করতে করতে এখন মৌ মাছির বন্ধুই হয়ে গেছেন হৃদয়। অনেকটা শখ থেকে অবসরে বা খুব মন খারাপ থাকলে হৃদয় মৌমাছিদের নিজ হাতে নিয়ে রাখেন কিছুটা সময়। মৌচাক থেকে মৌমাছির দলকে নিজ হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ান, আবার রেখেও আসেন মৌচাকে।
মধু সংগ্রহে বেশ পারদর্শী হৃদয়ের সঙ্গে মৌমাছির সখ্যতা বেশ উপভোগ করেন গ্রামের মানুষ। মৌমাছির বন্ধু হৃদয়ের আক্ষেপও আছে। গেল কয়েক বছর থেকে মৌমাছি ও মৌচাকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর কারণও খুঁজেছেন হৃদয়। তিনি বলেন, ‘ফসলে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে, ফুলে মধু সংগ্রহের পর অনেক সময়ই মারা যাচ্ছে মৌমাছি।’
মৌমাছিসহ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মৌমাছির বন্ধু হৃদয়।
হৃদয়ের প্রতিবেশী সালাম বলেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই হৃদয়ের হাতে বসে মৌমাছি। রানীকে বশ মানিয়েই নাকি এটি সম্ভব হয়েছে। এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জাব্বার বলেন, দিনমজুর হৃদয়ের ভাগ্য পরিবর্তনে দেওয়া হবে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ সরকারি প্রশিক্ষণ। বিষয়টি নিয়ে আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন।