স্টাফ রিপোর্টার : ‘দেশের শস্য ভান্ডার’ হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। জেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সোনালি বোরো ধান। কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের পরও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। হাট-বাজারে ধানের দাম কম থাকায় প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাই ভালো ফলনেও হাসি নেই দিনাজপুরের কৃষকের মুখে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, কেউ ভ্যানে, কেউ গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান। আবার কেউ রাস্তার ওপর ও খোলা মাঠে ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫শ’ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৭শ’ ১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন (চালে)। তবে চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
জেলার সদর উপজেলার করিমুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, আমি সাধারণ কৃষক। মানুষের কাছে বর্গা নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে বোর ধান লাগিয়েছি। আল্লাহর রহমতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার তাতে গায়ে গায়ে যায়, লাভ নাই। এক বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়েছি। এরপর হাল চাষ, ধানের বীজ, পানি, সার কীটনাশক সব কিছুর যে দাম, এতেই খরচ পড়ে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয় ৪০ মণ। বর্তমান ধানের বাজারে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা মণ। তাহলে ধান ছাষ করে লাভ কোথায়?
সদর উপজেলার বৈরাগীদিঘি গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান লাগিয়েছি। তার মধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কেটেছি। ফলন ভালো হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ধানের বাজার খুব খারাপ। এক বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এক মণ ধান বিক্রি করছি ৯শ’ ৫০ টাকা দরে। তাহলে কয় টাকা লাভ থাকে। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম যে পরিমাণ বাড়ছে, শুধু কৃষকের ধানের মূল্য নেই।
একই এলাকার আরেক কৃষক রানা সরকার বলেন, আমি আগাম জাতের আলু লাগিয়েছিলাম। আলু তোলার পর বগুড়ার জিরা জাতের ধান লাগিয়েছি ৪ বিঘা জমিতে। চার বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। বর্তমানে যে ধানের বাজার তাতে ধান বিক্রি হবে দেড় লাখ টাকার মতো। সরকার ধানের দাম দিছে ৩২ টাকা কেজি। সে হিসাবে এক বস্তা ধানের দাম আসে ২ হাজার ৪শ’ টাকা। কিন্তু বাজারে সেই ধান বিক্রি করছি ১ হাজার ৯শ’ টাকা বস্তা। এত বেশি পরিশ্রম করে ধান আবাদ করে আমাদের কি লাভ থাকে?
কৃষক সুবল রায় বলেন, ধান আবাদ করে কৃষকের কিছু থাকে না। প্রতিবার ধানের দাম কম থাকে। কিন্তু সার, কীটনাশক, পানি, ধান কাটা শ্রমিকে অতিরিক্ত খরচ লাগে। এক বিঘা জমিতে খরচ ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় এবার ধানের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে। সব ধান বিক্রি করে অল্প কিছু টাকা থাকে। তা দিয়ে পোষায় না। বাজারে সব কিছুর দামে বেশি।