স্টাফ রিপোর্টার : দিনাজপুর সদর উপজেলায় একটি বেপরোয়া ট্রাকের কারণে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে ২৫জন। এর মধ্যে ৩ জনের অবস্থাআশঙ্কা জনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনাটি অনুসন্ধান করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার (৫ জুলাই) ভোর ৬টায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের চকরামপুর ও জালিয়াপাড়ায় এই পৃথক দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জন হলেন ট্রাকের চালক ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মিত্রপট্টি গ্রামের মৃত সুরা মিয়ার ছেলে হাসু মিয়া (২৮), নাবিল কোচের সুপারভাইজার দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ মিলরোড এলাকার মৃত লক্ষণ বাহাদুরের ছেলে রাজেশ বাহাদুর (৩০), কোচের যাত্রী পীরগঞ্জ উপজেলার দানেশ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫২), বোচাগঞ্জ উপজেলার জাহিদের কন্যা বিভা (১০), চিরিরবন্দর উপজেলার খোচনা গ্রামের মমিনুলের ৫ মাসের কন্যা শিশু সায়মা মেহনাজ এবং ভ্যানচালক দিনাজপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের স্বদেশ রায় (২৩)।
জানা যায়, শুক্রবার ভোরে দিনাজপুর সদর উপজেলার চকরামপুর গ্রামে ঢাকা থেকে রানীশংকৈলগামী নাবিল পরিবহনের একটি কোচের (ঢাকা মেট্রো ট-১৪-৪১৯০) সাথে ও বিপরীতমুখী আম বোঝাই করা একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো ট- ১৭-০০৮৩) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে ট্রাকের চালক হাসু মিয়া ও কোচের সুপারভাইজার রাজেশ নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় হলে সায়মা, বিভা ও মোহম্মদ আলী মারা যান। গুরুতর আহত ২৫জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। বাকী ২০ জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
এর আগে চকরামপুর থেকে এক কিলোমিটার আগে জালিয়াপাড়ায় একই ট্রাকটি একটি ধান বোঝাই ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। দুর্ঘটনায় ভ্যানচালক স্বদেশ রায় গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১১টায় তিনি মারা যান।
চালকের আসনে হেলপার :
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলা থেকে আম বোঝাই ট্রাকটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় রানীশংকৈল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। কিন্তু চালক হাসু মিয়া ট্রাকটি চালানোর জন্য সহকারী কাউসার আলীকে দায়িত্ব দেন। দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, দুর্ঘটনাটি ঘটার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আমরা জানতে পেরেছি। এর মধ্যে অন্যতম চালকের আসনে হেলপারকে বসানো হয়েছিল এবং হেলপারের আসনে চালক বসে ছিল। গাড়ীটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। হেলপার কাউসারকে রংপুরে রেফার্ড করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন :
দুর্ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জানে আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, তদন্ত কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করবে। পাশাপাশি নিহতদের দাফনকার্য ও আহতদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।