মিরর ডেস্ক : গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন গত বুধবার অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এসব প্রস্তাবনায় দেশের সাংবিধানিক নাম ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। শুক্রবার এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যই হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে দেওয়া। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় সেটিই ফুটে উঠেছে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান স্বাধীনতা ও সংবিধান। আমাদের গৌরবের সংবিধান নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার কারো নেই।’
‘সংবিধান সংস্কার কমিশন বুধবার অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’
‘এছাড়া কমিশন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম তফসিল সংবিধানে না রাখার সুপারিশ করেছে। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
‘[১৫০ (২) ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখ হইতে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে এই সংবিধান প্রবর্তন হইবার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ষষ্ঠ তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং সপ্তম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হইল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ ও দলিল, যাহা উক্ত সময়কালের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী বলিয়া গণ্য হইবে।] ’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোনো এখতিয়ার নেই সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন করার। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই পারে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন করতে। পার্লামেন্ট ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার এটি করতে পারে না। তাদের যদি কোনো প্রস্তাবনা থেকে থাকে তাহলে সেটা আগামী সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে সেখানে উত্থাপিত হবে এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি মনে করেন সংস্কার প্রয়োজন তাহলে সংসদেই সেটা পাশ হবে।’
‘বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস মুছে ফেলার যে ঘৃণ্য অপচেষ্টা সেটি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আমি এই সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের এই ধৃষ্টতামূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’