২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি সন্ধিক্ষণ

ড. প্রণব কুমার পান্ডে : ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরেছিলেন এই দিনে। এই প্রত্যাবর্তন কেবল একটি বেদনাদায়ক ব্যক্তিগত নির্বাসনের সমাপ্তি ছিল না, বাংলাদেশের জন্য একটি রূপান্তরকারী যুগের সূচনা করেছিল। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছিল এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে দেশের যাত্রার পথ সুগম করেছিল।

শেখ হাসিনা এমন এক সময়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের নৃশংস হত্যার পর বাংলাদেশে চরম অশান্তি বিরাজমান ছিল। দেশ এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিকে চলছিল। একের পর এক সামরিক শাসন বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার মুছে ফেলার চেষ্টা করছিল।

যে দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, সেই আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ছিল। দলের নেতারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এবং নেতাদের আদর্শ দুর্বল করে ফেলার সকল ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। ফলে যারা স্বাধীনতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্য শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ছিল আশার আলো।

দলকে পুনর্গঠন করা, তৃণমূল স্তরের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা এবং দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি নতুন উদ্দেশ্যবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। দৃঢ় সংকল্প এবং কৌশলগত দক্ষতার মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে দলের কাঠামো পুনর্নির্মাণ করেন এবং জনগণের মধ্যে এর বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করেছিলেন।

১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকের জটিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা নেতৃত্বের গুণাবলি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি ও জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের প্রতি তার বিরোধিতা পরবর্তীকালে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তিনি ক্রমাগত ভাবে আন্দোলন ও বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তার প্রচেষ্টা সফল হয় যখন আওয়ামী লীগ সংসদীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে এবং শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশ ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরিকাঠামো, জ্বালানি ও উৎপাদন খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ত্বরান্বিত করেছে এবং লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা জাল সম্প্রসারণের মতো নীতিগুলো সারাদেশে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং লিঙ্গ সমতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিসহ সাক্ষরতার হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের ওপর সরকারের গুরুত্ব লিঙ্গ সমতাসহ অন্য ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্যসেবার অর্থায়নের মতো উদ্যোগগুলো চিকিৎসা পরিষেবাগুলোতে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার উন্নত করেছে এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

শেখ হাসিনা নেতৃত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মনিরপেক্ষতা ও অন্তর্ভুক্তির নীতি বজায় রেখে তার সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গভীরে নিহিত ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের প্রতি এই অঙ্গীকার তার প্রশাসনের মূল ভিত্তি।

তাছাড়া, শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একজন দৃঢ় প্রবক্তা ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তার সরকারের প্রচেষ্টা, ঐতিহাসিক অভিযোগগুলোর সমাধান এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নির্বাসন থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শীর্ষে তার যাত্রা তার অদম্য চেতনা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার উৎসর্গের একটি প্রমাণ। তার প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি কেবল আওয়ামী লীগকেই সংগঠিত করেননি বরং বাংলাদেশকে উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক স্বীকৃতির নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

পরিশেষে বলা যায়, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বিধায় আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধার হয়েছিল এবং বাংলাদেশ অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জন করেছে। তার নেতৃত্ব দেশকে আরও উজ্জ্বল, আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে অনুপ্রাণিত ও পরিচালিত করে চলেছে।

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর।

(প্রকাশিত লেখাটির মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে কোন আইনগত ও অন্য কোন ধরনের দায়-ভার মিরর টাইমস্ বিডি বহন করবে না)।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
মার্চ ২৩, ২০২৫
temperature icon 22°C
overcast clouds
Humidity 68 %
Pressure 1015 mb
Wind 5 mph
Wind Gust Wind Gust: 11 mph
Clouds Clouds: 91%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:06
Sunset Sunset: 18:17

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top