১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

ভারতে বাড়ছে বাংলাদেশিদের বহির্মুখী বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ

ফারাজী আজমল হোসেন : সরকারি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, ভারতে বাড়ছে বাংলাদেশিদের বহির্মুখী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ। ভারতীয় শিল্পপতিরাও বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগের বহর বাড়িয়ে চলেছেন। তারা ‘ভারত বয়কট’ প্রচারকে উপেক্ষা করে দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে, একে অন্যের দেশে বিনিয়োগ করছে। সময়ের তাগিদেই উভয় দেশের শিল্পপতিদের এই বিনিয়োগ সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই দুই দেশের সরকারই উৎসাহ দিচ্ছে এই বিনিয়োগকে।

সামাজিক গণমাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট প্রোপাগান্ডা’ আসলেই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। বিদেশের মাটিতে বসে আওয়ামী লীগ সরকারেরই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের সমর্থক কিছু ধান্দাবাজ ভারত বয়কটের পক্ষে প্রচার চালিয়ে দেশের ক্ষতি করতে চাইছে। কারণ প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তা এখন যে কোনও দেশের কাছেই জরুরি। কিন্তু এ ধরনের প্রচারণা বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। বাংলাদেশি শিল্পপতিদের কাছে ভারতে ব্যবসা করার ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কোনো ঝামেলাও নেই। একই যুক্তি খাটে ভারতীয় শিল্পপতিদের ক্ষেত্রেও। তাই এই সুসম্পর্ককে অক্ষুন্ন রাখতে উভয় দেশকেই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

অতি সম্প্রতি ঢাকার কাছেই ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি সান ফার্মার দ্বিতীয় কারখানাটি উদ্বোধন হয়েছে।এই কারখানা থেকে প্রতি বছর ১০০ কোটি ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল উৎপাদিত হবে। প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘করোনাকালে টিকা ও অক্সিজেন দিয়ে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। আগামীতেও ওষুধসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত’। আর সালমান রহমান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আরও অনেক খাতেই আমাদের কাজের সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত’।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ভারতে আরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এইচএসটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম শোয়েব চৌধুরীর মতে, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি অনেক পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এসব রাজ্যে রপ্তানি কঠিন হওয়ায় প্রাণসহ বেশকিছু কোম্পানি সেখানে বিনিয়োগ করেছে। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে কস্ট অব ডুয়িং বিজিনেস (ব্যবসায়ের খরচ) বাংলাদেশের তুলনায় কম। এছাড়া, বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা থাকায় ভবিষ্যতে আরো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে আশা করি। এরজন্য দুই দেশেরই পদক্ষেপ নিতে হবে’।

ভারত বয়কটের প্রচার বাড়লেও তার প্রভাব মানুষের কাছে বিন্দুমাত্র পড়েনি। তাই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের বিপরীতে ভারত ও বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলছে আগের মতোই। পেঁয়াজ থেকে শুরু করে ভারত বহাল রেখেছে আমাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী রপ্তানি। বাংলাদেশি পণ্যেরও রপ্তানিও বিনিয়োগের মতোই চলছে বহাল তবিয়তে। উভয় দেশই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে মন দিয়েছে। সহজতর বাণিজ্যের স্বার্থে রুপি ও টাকায় লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা। দ্বিপাক্ষিক ব্যবসার পাশাপাশি বাড়ছে ভারতীয় ভিসার চাহিদা। গত ঈদের ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণ করেন। ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল শুধু বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়েই স্থলপথে দৈনিক গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেছেন। আকাশপথে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই বা চেন্নাইয়ের ফ্লাইটে কিংবা পেট্রাপোল ছাড়াও হিলি, ডাউকি বা আখাউড়ার মতো অন্য স্থলসীমান্তগুলো দিয়েও প্রতিদিন ভারতে প্রবেশে করেছেন আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশি। সড়ক, বিমান ও রেলপথে ঈদের ছুটিতে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি ভারতে গিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।

আসলে উভয় দেশই একে অন্যকে আসল বন্ধু বলে মনে করে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ বাংলাদেশ-ভারত কনস্যুলার ডায়ালগ। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ টি এম রকিবুল হক এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন যুগ্ম সচিব ড. আমান পুরী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়, প্রত্যাবাসন, পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি এবং প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ভারতে সফরসহ বাংলাদেশিদের ভিসাপ্রাপ্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরা হয়। উভয় পক্ষ নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইতিমধ্যেই ভারত বাংলাদেশীদের চিকিৎসার প্রয়োজনে মাত্র এক দিনেই শর্তসাপেক্ষে ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে। সবমিলিয়ে উভয় দেশ বর্জনের বদলের বন্ধুত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষও সেটাই চাইছেন।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ।

(প্রকাশিত লেখাটির মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে কোন আইনগত ও অন্য কোন ধরনের দায়-ভার মিরর টাইমস্ বিডি বহন করবে না)।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
ফেব্রু ১৪, ২০২৫
temperature icon 19°C
clear sky
Humidity 28 %
Pressure 1015 mb
Wind 5 mph
Wind Gust Wind Gust: 5 mph
Clouds Clouds: 0%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:41
Sunset Sunset: 17:58

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top