মানিক লাল ঘোষ : বরণীয়, স্মরণীয় আর অনুকরণীয় মানুষের সংখ্যা আজ খুবই কম। যতই দিন যাচ্ছে ব্যক্তিগত চাওয়া, পাওয়া, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ আর আত্মঅহমিকা আমাদের মনমানসিকতাকে ক্রমাগত গ্রাস করে ফেলছে। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই যেনো আমি কী হনুরে ভাব! সমাজের প্রচলিত এই ধারার বিপরীতে নির্লোভ ও নিরহংকারী মানুষের আজ বড়ই অভাব। সেই হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।
ব্যক্তি জীবনে তিনি কতটা নির্লোভ ও নিরহংকারী ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু না থাকলেও এই প্রজন্মের কাছে তার জীবনাদর্শ তুলে ধরা জরুরি। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন সাদামাটা এক মানুষ। একটি স্বাধীন দেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা হয়েও অতিসাধারণ জীবন যাপন করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনোই ক্ষমতার ব্যবহার করেননি। বরং নীরবে নিভৃতে সারাজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন ড. ওয়াজেদ মিয়া।
মরহুম আবদুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জুননেছার সন্তান এম এ ওয়াজেদ মিয়া সুধা মিয়া নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য তাকে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশনসহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস করেন।
মেধার চর্চা করে নিজেকে পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি রাজনীতির প্রতি তার একটি সুগভীর আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছেন। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ফজলুল হল ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের মনোনয়নে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হলে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ ও নীবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করার পর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আাসেন তিনি। একই বছর ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তরুণ বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া। ১৮৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে এম এ ওয়াজেদ মিয়াও অনেক ঘাত প্রতিঘাতের শিকার হন। স্ত্রী শেখ হাসিনা ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসময়ে জার্মানিতে ছিলেন তিনি। তাদের সাথে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা । জার্মানিতে ৭ বছর নির্বাসিত জীবনে বিজ্ঞান চর্চা ব্যহত হয় এই তরুণ বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার। তা না হলে জাতিকে আরে অনেক কিছু দিতে পারতেন তিনি। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের কারণে কিছুদিন কারাবরণও করেন তিনি।
কাজ পাগল পরমাণু বিজ্ঞানী তার মেধাকে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে লেখক হিসেবে ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্নাতক পর্যায়ের বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইংরেজিতে লেখা গ্রন্থদ্বয়ের নাম Fundamentals of Thermodynamics এবং Fundamentals of Electromagnatics।
তার অন্যতম গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। ৪৬৪ পৃষ্ঠার সুপরিসর এই গ্রন্থে বাংলাদেশের বহল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র যা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।তার লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক গ্রন্থ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তার সাধারণ জীবন যাপনের প্রভাব পড়েছে পুরো পরিবার জুড়ে। নিজের কথা না ভেবে ড. ওয়াজেদ মিয়া সারাজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণের কথাই ভেবেছেন। সন্তানদের ও গড়ে তুলেছেন একই চিন্তা চেতনায়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা আজ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া-শেখ হাসিনার পুত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার সজীব ওয়াজেদ জয় তারুণ্যের অহংকার। তিনি সমৃদ্ধ আগামীর প্রতিচ্ছবি। আর মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা সবাই আজ বিশ্ব জুড়ে আলোকিত। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারা। আর এটা সম্ভব হয়েছে পারিবারিক সততা, দেশপ্রেম, কাজের প্রতি ভালোবাসা ও নির্লোভ থাকার কারণে।
লেখক : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য।
(প্রকাশিত লেখাটির মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে কোন আইনগত ও অন্য কোন ধরনের দায়-ভার মিরর টাইমস্ বিডি বহন করবে না)।