৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

নির্বাচনী ইশতেহার ও নতুন সরকারের কাছে নাগরিক প্রত্যাশা

লীনা পারভীন : “স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান” শ্লোগান দিয়ে এবার ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে মোট ১১ টি এরিয়া ধরে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে আছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক সু-ব্যবস্থাপনা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

এই আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সরকারের দায়িত্বে আছে গত এক দশকেরও বেশি সময়। ইতিমধ্যেই তারা আবারও আগামী ৫ বছরের জন্য জনগণের রায় নিয়ে শপথ গ্রহণ করেছে। আগের ইশতেহারগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখলে যে বিষয়টা আমার কাছে খুব পরিষ্কার মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে এবারের ইশতেহারে সরাসরি কিছু কথা বলা হয়েছে। পূর্বের ইশতেহারের সাথে নীতিগত আলাপে পার্থক্য নাই বা থাকার কথাও ছিলো না। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা দায়িত্ব নিবে তাদের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনায় পার্থক্য থাকা কাম্য নয়, কারণ প্রতিটা কাজেরই ধারাবাহিকতা থাকা উচিত। অন্যথায় উন্নয়ন পরিকল্পনা বা কাজের ধারাবাহিকতা থাকেনা। সেদিক থেকে ২০১৮ এর ইশতেহারকে মিলালে সেই ধারাবাহিকতারই পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এবার আরও সরাসরি বলা হয়েছে। যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। বিশেষ করে সদ্য সাবেক সরকারের আমলে যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি সংকট তৈরি করেছিলো সেটি ছিলো দ্রব্যমূল্য। এবারের ইশতেহারে এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই সম্ভবত স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। ইশতেহারে আরও আছে অর্থনৈতিক সু-ব্যবস্থাপনা।

সরকার আসে সরকার যায়। জনগণ তার জায়গাতেই থাকে। জনগণের চাওয়াপাওয়াগুলোরও তাই কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন হয় না। আর যুগের পর যুগ কেবল এই ইস্যুগুলোর মিমাংসার মাধ্যমে নাগরিক জীবনে সস্তির আশায় সরকার পরিবর্তন করে জনগণ। এ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাক্ষী এখন প্রজন্ম। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে বা নতুন বিমানবন্দর এ সবকিছুই আমাদের এগিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই উন্নয়নকে দৃশ্যমান বলতে আমি বুঝতে চাই সকল ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা। দুর্নীতির সাথে যুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় এনে একটি জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। উন্নয়নের দৃশ্যমান বলতে আমি বুঝতে চাই দেশের মানুষের চিন্তার জগতের উন্নয়ন যার জন্য দরকার একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কাঠামো গড়ে তোলা। মৌলবাদকে মোকাবিলায় সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। উন্নয়নের ভিজিবিলিটি বলতে আমি বুঝতে চাই নারীর অবাধ চলাফেরার নিশ্চয়তা। নারীর এগিয়ে যাওয়ায় যেন কোনো সামাজিক বাধা আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা।

স্মার্ট বাংলাদেশের পথেই হাঁটছি আমরা কিন্তু সেই স্মার্ট প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যারা মানুষের পকেট মেরে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের যথেষ্ট অভাব ছিলো বিগত সরকারে। প্রযুক্তির শিক্ষার পাশাপাশি একটি সুশাসনের কথাও ভাবা প্রয়োজন। প্রযুক্তির উন্নয়ন যেন সাধারণ মানুষের জীবন নাশের কারণ না হয়ে যায়। কেবল টিকচিহ্নের উন্নয়ন চাইনা আমরা।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর বেশিরভাগই ছিলো অকার্যকর। সবাই ছিলো একজন শেখ হাসিনার মুখাপেক্ষি। এই অবস্থার উত্তরণও জরুরি। তিনি একমাথায় যদি সবকিছুই করতে পারেন তাহলে আর এতো বিশাল মন্ত্রিসভার কাজ কী? এতো প্রশাসনিক কাঠামোর দায়বদ্ধতার জায়গাটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে আগ্রহ আছে অনেক কিন্তু সেই তুলনায় জনসংশ্লিষ্টতা ছিলো অনেক কম। সারাদেশের সাংস্কৃতিক অবকাঠামোগুলোকে অবহেলায় হারাতে বসেছে প্রায়। গ্রামগঞ্জ বা জেলা ইউনিয়নের কোথাও এখন আর সাংস্কৃতিক আয়োজন হয় না। আর এই জায়গাটি দখলে নিয়ে নিচ্ছে মৌলবাদ বা ধর্মান্ধতা। এই ধর্মান্ধতা আজকে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারও হাতখোলাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। এইতো সামনেই পহেলা বৈশাখ। আবারও শুরু হবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর মিথ্যা আস্ফালন। এটা করা যাবেনা, ওটা করা যাবেনার বায়না।

আসলে বলতে গেলে অনেক লম্বা “উইশ লিস্ট” হয়ে যাবে। তবে আশা করছি এই টার্মে সরকার আরও সচেতন হয়ে কাজ করবে। “প্রায়োরিটি” তালিকা করে করে সংশ্লিষ্ট সকলে নিজেদের কাজটি করবেন সুচারুভাবে। দিনশেষে আমরা একটি সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ চাই যেখানে নারী পুরুষ বা জাত ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মিলে একসাথে কেবল “বাংলাদেশী” পরিচয়ে বাঁচবো। সেই বাংলাদেশ চাই যার মূলমন্ত্র হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।

লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
অক্টো ৯, ২০২৪
temperature icon 25°C
moderate rain
Humidity 89 %
Pressure 1010 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 5 mph
Clouds Clouds: 87%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:01
Sunset Sunset: 17:44

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top