১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

নির্বাচনি বাণিজ্যে আম-ছালা দুই গেছে ওদের?

মোস্তফা হোসেইন : নির্বাচনি উত্তেজনার মধ্যেও কিছু বিষয়ের প্রতি মানুষের কৌতূহল থাকে। ব্যতিক্রম নয় এবারও। বিএনপিবিহীন দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে স্বাভাবিক কারণেই কৌতূহলের অনুঘটক হিসেবে জাতীয় পার্টির দিকেই মানুষের নজর যাওয়ার কথা। নির্বাচনি রাজনীতিতে সক্ষমতা প্রমাণের প্রথম ধাপ হিসেবে দলটি আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি আসনে প্রার্থী দিয়ে চমক সৃষ্টির চেষ্টা করে। আসলে এটাই ছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কৌতূহল বাড়ানোর বড় উপাদান। যে দলটি নেতৃত্বের কোন্দল এবং নানাবিধ কারণে ক্ষয় হতে হতে মাইক্রোবাস পার্টিতে পরিণত হওয়ার পালা, সেই দলটি কোনও কারণে এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নির্বাচনের দিকে?

দলের মহাসচিব কিংবা চেয়ারম্যান যখন বলেন ৩০০ আসনেই তারা নির্বাচনে প্রার্থী দেবেন তখনও এতটা কৌতূহল জাগেনি। কারণ এগুলোকে মানুষ কথার কথা হিসেবেই মনে করেছে। কিন্তু প্রার্থী মনোনয়নের চিত্র দেখে অনেকেই অবাকও হয়েছে।

যথানিয়মে দলটি ১৩ আসন কম ৩০০ প্রার্থীকেই নির্বাচনি মাঠে নামিয়ে দেয়। মানুষ একটু মুচকি হেসেছে-এই বলে- কিংস পার্টির সামর্থ প্রমাণে নবম শ্রেণি থেকে হয়তো দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলো দলটি। তবে সন্দেহ কিন্তু সবারই ছিল। এই ২৮৭ প্রার্থীর মধ্যে কতজন এসএসসি দিয়ে কলেজে ঢুকতে পারবেন, কতজন পরীক্ষা পর্যন্ত টিকে থাকবেন। সন্দেহটা অতি দ্রুতই বাস্তবে প্রমাণ হতে থাকে। ২৬ জন কম ২৮৭ জনই দেখলেন- শীর্ষ নেতৃত্ব ২৬ আসনে রফা করে নিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলো জাতীয় পার্টি। কারণ নিজেরা যেখানে ঘোষণা করেছে ৩০০ আসনে লড়াই করার সক্ষমতা তাদের আছে, তাহলে ২৬ আসনে সমঝোতা করছে কেন। এর মাধ্যমে তারা সমালোচকদের সুযোগ করে দিলেন- বাগারম্বর করা দল হিসেবে আখ্যায়িত করার এবং তাদের দৌড় নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দেওয়া পর্যন্ত। যেই নৌকায় দলীয় প্রধানসহ সিনিয়র নেতাদের অনেকেই আছেন। ২৬ বহির্ভূতরা তখনও উচ্চবাচ্য করা থেকে বিরত থাকে। গভীর দৃষ্টিতে যারা তাকাচ্ছিলেন, তারা বুঝতে পারছিলেন, গণেশ উল্টে যাওয়ার মতো কিছু একটা ঘটবে নিশ্চিত। নতুন বছরের শুরুতে তাদের সুর বদলাতে থাকে। পাড়ার ইলেকট্রিক খুঁটিগুলোতে লাঙ্গলের পোস্টার না লাগানোর মাজেজা আস্তে আস্তে বের হতে থাকে। মাত্র একদিনের মধ্যেই তাদের চেহারা আরও স্পষ্ট হতে থাকে। প্রার্থীদের মুখ থেকে বের হতে থাকে ৫০ লাখ আর ৩০ লাখ টাকার আশ্বাস বানীর কথা।
কৌতূহল এবার কৌতুকে পরিণত হতে শুরু করে। তাহলে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পেছনে এই ৩০ লাখ আর ৫০ লাখ টাকার টোপ কাজ করেছিলো? তারা দোষ দিতে থাকেন তাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি। অথচ তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। কেউ ফোন ধরে না- দলীয় লজিস্টিক সাপোর্টও পাচ্ছেন না তারা। সেই ক্ষোভে বেশ কিছু প্রার্থী প্রকাশ্যে দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আশায় আশায় অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তাদের নামে হয়তো ব্যালট পেপার ছাপাও হয়ে গেছে। না হলেও শেষ হওয়ার পথে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানও প্রথম দিকে ঘরেই বসে ছিলেন। পত্রিকাগুলোতেও সংবাদ হতে থাকে চেয়ারম্যানের গৃহবাস দেখে। মহাসচিবও ঢাকা ছেড়ে নিজ আসনে ভোট চাইতে চলে গেছেন নিজ এলাকায়। দলীয় রাজনৈতিক সুবিধা হিসেবে দলীয় শীর্ষ নেতাদের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়ার রীতি ভেঙ্গে নিঃসঙ্গতায় ফেলে দেয় প্রার্থীদের। প্রার্থীতা প্রত্যাহার যখন সংক্রমিত হতে থাকে, তখন চেয়ারম্যান বলে দিলেন, যে চায় নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার এই বক্তব্য দলীয় প্রার্থীদের কাছে কাঁটা ঘায়ে লবণ দেওয়ার মতো মনে হতে থাকে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তাদের প্রথম চেয়ারম্যানের পথ থেকে দূরে সরে যাননি। তিনিও একবার বামে একবার ডানে তাকানোর কাজটি করতে থাকেন। দলীয় প্রার্থীরা যে মুহূর্তে প্রার্থীতা ত্যাগের জন্য লাইন ধরেছে, তিনি বলে দিলেন, দলীয়ভাবেও প্রত্যাহারের সম্ভাবনা কম নয়। এতে করে দলের অভ্যন্তরে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা বুঝতে বেশি ভাবিত হওয়ার কথা নয়। আর প্রশ্নগুলো যে তার দিকেই বেশির ভাগ সেটাও না বোঝার কথা নয়।

‘দেবর-ভাবীর কাইজ্জা’র শেষ অধ্যায় রচিত হলো ভাবীর কোনঠাসা তথা পর্দার আড়ালে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। এবার কি দেবরও ভাবীর পথ অনুসরণ করবেন? ভাবী ও তার অনুসারীদের বেলায় যতটা সহজ হয়েছে, দেবরের পক্ষে বোধ হয় তেমনটা নাও হতে পারে। কারণ তিনি নিজ দলের সক্ষমতার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। বরং দম্ভও প্রকাশ পেয়েছে তার কথায়। এখন হঠাৎ এমন কী কারণ দেখা দিলো যে, দলীয় কোনও সহযোগিতাই প্রার্থীরা পাচ্ছেন না? এতদিনের অর্জন কি তাহলে পরনির্ভতার শতভাগ পূরণ হওয়া? পরনির্ভরতার কারণেই প্রার্থীদের সামান্যতম সহযোগিতাও নিশ্চিত করতে পারেনি দলটি। এটাই প্রমাণ হয়ে গেলো।

এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টি যদি দলগতভাবেও সরে যায় তাহলে নির্বাচনে তার কেমন প্রভাব পড়বে, সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। এই মুহূর্তে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেও অফিসিয়েলি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থেকেই যাবে। ব্যালটে তাদের প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক থাকবে। অন্যদিকে নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলেও পার পাওয়ার সুযোগ কম। কারণ একজন প্রার্থী দলীয় লজিস্টিক সাপোর্ট সামান্য কিছু পেলেও  বাকি খরচটুকু তারা নিজেরা করে। তারা তো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাইরে কিছুই করেনি। মানে তারা কোনও টাকা খরচে উৎসাহী নন। তারা শতভাগই নির্ভর করেছেন অন্যরা সেগুলো করে দেবে।

এই মুহূর্তে প্রার্থীর নির্বাচন করার সক্ষমতার চেয়ে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি তাদের ক্ষোভই বেশিরভাগ প্রকাশ হতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা কখনও বলছেন, ৩০ লাখ ৫০ লাখের ঘটনাটা আসলে কী? আসলেই কি এমন কিছু ঘটেছে। হয়তো তাদের এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কারও পক্ষ থেকে, হয়তো বা প্রার্থীরা ভেবেছেন নিজেরাই এগিয়ে যেতে পারবেন। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্নতর। আওয়ামী লীগের ওপর ভরসা করে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের কি নেতারা তেমন কোনও আশ্বাস দিয়েছিলেন? প্রার্থীরা বলছেন মাঠে প্রতিপক্ষের খরচের সঙ্গে তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এই অবস্থাটা কি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরপর ছিল না? প্রার্থীতা প্রত্যাহারকালেও কি ছিল না? বাস্তবতা হচ্ছে তারা ঝিম মেরে ছিলেন।

সমালোচকরা বলছেন-জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়নকালে নির্বাচন করার চেয়ে বাণিজ্যই ছিল মুখ্য। ৩০ লাখ ৫০ লাখ পাওয়ার আশায় তারা মাঠে নেমেছিলেন, এমনটা তাদের কথা থেকেই বেরিয়ে আসে।এই মুহূর্তে বলা যায়-জাতীয় পার্টির নেতাদের পিছু হটা দেখে মনে হচ্ছে-আম ছালা দুইই গেছে।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক

(প্রকাশিত লেখাটির মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে কোন আইনগত ও অন্য কোন ধরনের দায়-ভার মিরর টাইমস্ বিডি বহন করবে না)।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
নভে ১৩, ২০২৪
temperature icon 24°C
clear sky
Humidity 55 %
Pressure 1011 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 4 mph
Clouds Clouds: 0%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:21
Sunset Sunset: 17:17

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top