২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন মঞ্জুর হয়েছে

মিরর ডেস্ক : এ যেন জীবনানন্দ দাশের সেই ‘আট বছরের আগের একদিন’ কবিতার পুনর্দৃশ্যায়ন। ‘বধূ শুয়েছিলো পাশে— শিশুটিও ছিলো; প্রেম ছিলো, আশা ছিলো—জ্যোৎস্নায়– তবু সে দেখিল কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার? অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল— লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার। এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি! রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি, আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার; কোনোদিন জাগিবে না আর।’ নিভৃতচারী কবির এই পঙতি মালার মতোই নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দা জোরায়া টার বিকের যেন ‘মরিবার সাধ’ হয়েছে। সব থাকার পরও তার ফুরিয়ে গেছে বাঁচার তৃষ্ণা।

অসহনীয় ও দুরারোগ্য মানসিক যন্ত্রণার শিকার হওয়া এই নারী স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এবার ২৯ বছর বয়সেই তিনি যেতে পারবেন স্বেচ্ছা মরণের পথে। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে।

সাড়ে তিন বছরব্যাপী প্রক্রিয়া শেষে এ অনুমতি পেয়েছেন তিনি। গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে টার বিকের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনের খবর প্রকাশ হয়।

টার বিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, ‘লোকে মনে করে মানসিকভাবে অসুস্থ কেউ ঠিকমতো চিন্তা করতে পারে না। এই ভাবনা অপমানজনক। …কেউ কেউ মনে করেন, কিছু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য চাপে রাখা হয় কি না। কিন্তু নেদারল্যান্ডসে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এ আইন আছে। নিয়মকানুনগুলো ভীষণ কড়া, এবং সত্যিকার অর্থেই নিরাপদ।’

টার বিকের কষ্টের শুরুটা শৈশবেই। তিনি ক্রনিক ডিপ্রেশন (দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা), উদ্বেগ, ট্রমা ও আনস্পেসিফাইড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। তার অটিজমও রয়েছে।

প্রেমিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর টার বিক ভেবেছিলেন তার সঙ্গে নিরাপদে থাকতে থাকতে একসময় তিনি সেরে উঠবেন। তবে নাকি ফল হয়নি। উল্টো তার ভেতরে আত্মহত্যাপ্রবণতা আরো বাড়তে থাকে।

৩০ সেশনেরও বেশি ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নিয়েছেন তিনি। কিন্তু থেরাপিতে বিক টার নিজের সম্পর্কে, নিজের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে অনেককিছু জানলেও তাতে ‘মূল সমস্যার সমাধান হয়নি’। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার শুরুতে মনে আশা জাগে। ভেবেছিলাম আমি ভালো হয়ে যাব। কিন্তু চিকিৎসায় যত সময় গড়াতে লাগল, আমি ততই আশা হারাতে শুরু করলাম।’

১০ বছর পরে চিকিৎসার আর ‘কিছুই বাকি নেই’। বিক টার বলেন, ‘আমি জানতাম, এখন যেভাবে বেঁচে আছি, তাতে টিকে থাকতে পারব না।’ বিক টার আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু স্কুলের এক বন্ধুর ভয়াবহ আত্মহত্যা এবং তার পরিবারের ওপর ওই ঘটনার প্রভাবের কথা মনে করে আত্মহনন থেকে বিরত থাকেন তিনি।

২০২০ সালে ইসিটি শেষ করার বেশ অনেকটা সময় পর, ওই বছরের ডিসেম্বরে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করেন বিক টার। বিক টার জানান, আবেদন চূড়ান্ত হতে সাড়ে তিন বছর লেগেছে। তবে এই সময়েও তিনি একবারও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। তবে তার অপরাধবোধ হয়েছে নিজের সঙ্গী, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য।

নিজের মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে সাক্ষাতের পর টার বিক আশা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার জীবনাবসান করা হবে।

জীবনাবসানের দিনে মেডিক্যাল টিম টার বিকের বাড়িতে যাবে। তিনি জানান, ‘প্রথমে তারা আমাকে ঘুমের ওষুধ (সিডেটিভ) দেবেন। আমি কোমায় যাওয়ার পরই হৃৎস্পন্দন থামানোর ওষুধ দেবেন। আমার জন্য ব্যাপারটা হবে ঘুমিয়ে পড়ার মতো। আমার সঙ্গী উপস্থিত থাকবে, তবে ওকে বলেছি মৃত্যুর আগমুহূর্তে চাইলে ও ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।’

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
মার্চ ২৩, ২০২৫
temperature icon 20°C
scattered clouds
Humidity 77 %
Pressure 1015 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 5 mph
Clouds Clouds: 26%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:06
Sunset Sunset: 18:17

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top