গাজীপুর : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যে গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল, তার সঙ্গে গাজীপুরে পাওয়া গ্রেনেডের মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমবার (৮ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ির নির্মাণকাজের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে গ্রেনেডগুলো পাওয়া যায়। বিকালে সেগুলো উদ্ধার করেছে বোম ডিসপোজাল ইউনিট।
বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাহমুদুজ্জামান বলেন, ‘মাটির কলসভর্তি ১৬টি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। একই ধরনের গ্রেনেড দিয়ে ২১ আগস্ট হামলা চালানো হয়েছিল। এগুলো আরজেএস গ্রেনেড। ঘটনাস্থলে এসে দেখি মাটির কলসে পলিথিনে মুড়িয়ে শক্তিশালী গ্রেনেডগুলো রেখে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। জায়গাটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রোবট দিয়ে দেখেছি, গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত কিনা। এতে দেখা গেলো, সবগুলো অক্ষত। পলিথিনে মোড়ানো থাকায় একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে ছিল। আলাদা করতে খুবই সমস্যা হয়েছে আমাদের। তারপরও সতর্কতার সঙ্গে আলাদা করতে পেরেছি আমরা। এরপর গর্ত খুঁড়ে তার ওপর একটি ঢাকনা দিয়ে এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ছয় ঘণ্টা ধরে সবগুলো নিষ্ক্রিয় করেছেন।’
আরজেএস গ্রেনেড খুবই শক্তিশালী জানিয়ে মাহমুদুজ্জামান আরও বলেন, ‘নিষ্ক্রিয় করার আগে ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২১ আগস্টের সময়কার গ্রেনেড, আর এই গ্রেনেড একই। তবু আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। তখন আরও বিস্তারিত জানা যাবে। এগুলো ঠিক কতদিন আগে এখানে রাখা হয়েছিল, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারা এখানে এগুলো রেখেছিল, কোন উদ্দেশ্যে রেখেছিল, এসব নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং আমরা আলাদাভাবে তদন্ত করবো।’
ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-১-এর গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর জুন্নুরাইন বিন আলমের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাশেম মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছেন। সম্প্রতি ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নেন। সোমবার সকালে শ্রমিকরা জমিতে মাটি খনন শুরু করেন। সকাল ৯টার দিকে গর্তের ভেতর থেকে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। কোদালের আঘাত কলসটি ভেঙে গেলে ভেতরে গ্রেনেড দেখা যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা এসে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এগুলো পরিত্যক্ত বলে ধারণা করে। নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিকালে উদ্ধারের পর প্রত্যেকটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বাড়ির মালিক আবুল কাশেম বলেন, শ্রমিকরা সকাল ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানান। প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করি। পরে সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। বিকালে গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেছে বোম ডিসপোজাল ইউনিট।