মিরর স্পোর্টস : এটাকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বলা ঠিক হবে কিনা সেটা নিয়ে তীব্র কথা কাটাকাটি হতে পারে! একদিকে চট্টগ্রাম টেস্ট পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়ার গৌরব! আরেক দিকে চট্টগ্রাম টেস্টে বাজেভাবে হারের অপেক্ষা। তাইজুল ইসলাম যখন লাহিরু কুমারার করা দিনের শেষ বলটি খেলে ফেললেন তখন কোন অবস্থায় বাংলাদেশ দল, নিজেদের নিয়ে কী ভাবছেন সেটা জানা বেশ জরুরী?
মুমিনুল হক দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। যিনি দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি ছোঁয়ার পর আত্মাহুতি দিয়ে আসেন নিজের উইকেট। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান তিনিই করেছেন। বাকিদের অবস্থাটা একবার চিন্তা করুন। যদি এক কথায় বলতে হয় তাহলে বলা যায়, ভুলে যাওয়া ব্যাটিং ব্যাটসম্যানদের। আগে পরে আর কিছু যোগ না করলেও অভিযোগ নেই।
সিলেটের মতো চট্টগ্রামেও বাংলাদেশকে ৫১১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। টেস্ট ইতিহাসে রান তাড়ার রেকর্ড ৪১৮ রানের। তাই ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরাতে ইতিহাসই গড়তে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু শেষ পাঁচ ইনিংসে যাদের দলীয় রান দুইশ ছাড়ায়নি, যারা টেস্ট ব্যাটিংটাই ভুলে গেছে তাদের থেকে বড় প্রত্যাশা করা কঠিন। প্রত্যাশা মাফিক পারফরম্যান্সও আসেনি।
সাগরিকার গোধূলিলগ্নে তাইজুল-মিরাজের অবিচ্ছিন্ন জুটি যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিল তখন বাংলাদশের স্কোরবোর্ডের চিত্রটা এরকম, ৭ উইকেটে ২৬৮। বাংলাদেশের ২৪৩ রানের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার জিততে চাই মাত্র ৩ উইকেট। ম্যাচের সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে তা প্রথম ইনিংসেই নির্ণয় হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা কেমন করে সেটাই ছিল দেখার। রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে এবারও তালগোল পাকানো পারফরম্যান্স। নেই দায়িত্ববোধ। নেই টিকে থাকার মানসিকতা। ভুল শটে বারবার ফিরে আসা। বাড়তি শট খেলার চেষ্টায় মনোযোগে ঘাটতি, মনোসংযোগ নড়বড়ে। তাতে যা হবার তা-ই হয়েছে।
কয়েক মুহূর্তের লড়াই। এরপর হাল ছেড়ে দেওয়া। জয়, জাকির, শান্ত কিংবা থিতু হওয়া সাকিব, লিটন যেভাবে আউট হয়েছেন তাতে কাঠগড়ায় দাড় করানো যায়। শ্রীলঙ্কার আজ লক্ষ্য ছিল ৫০ থেকে ৬০ রান যোগ করা। তাতে লিড পাঁচশ ছাড়াবে। সকালের সেশনে প্রথম ঘণ্টায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজের ব্যাটে শ্রীলঙ্কা কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আগের দিনের ১০২ রানের ৫৫ রান যোগ করে ৭ উইকেটে ১৫৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অতিথিরা। ১৫ ওভার ব্যাটিং করে ইনিংস ছেড়ে দেয় তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫৭ রান করেছে তারা। প্রথম ইনিংসের ৩৫৩ রানের লিডসহ বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১১ রানের।
বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র উইকেটটি নেন সাকিব আল হাসান। ঞ্চাশ ছুঁয়ে সাকিবের বলে বোল্ড হন ম্যাথুজ। বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের ফাইফারে। আগের দিন ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। আজ ১ উইকেট পেলেও হতো। কিন্তু দুই স্পেলে বোলিংয়ে এসেও তার ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া হয়নি। দুই ইনিংস মিলে ৬ উইকেটে সন্তুষ্ট থাকতে হলো অভিষিক্ত পেসারকে।
ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম সেশনে প্রায় এক ঘণ্টার ব্যাটিংয়ে কোনো উইকেট হারায়নি স্বাগতিকরা। অথচ দ্বিতীয় সেশনে দুই ঘণ্টার খেলাতেই নেই ৪ উইকেট। জয়ের আঊট দিয়ে উইকেটের মিছিল শুরু। প্রাবাথ জায়াসুরিয়ার জোরের ওপর করা আর্ম ডেলিভারি ছিল উইকেটের ওপরে। ওই বল উইকেট থেকে সরে কাট শট খেলা মানে শতভাগ ঝুঁকি ডেকে আনা। উইকেট আত্মাহুতি দেওয়া। জয় সেই কাজটাই করলেন। তাতে এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প। ১০ রানে জীবন পাওয়া জাকির আবার বিশ্ব ফার্নান্দোর শিকার। ওয়াইড ক্রিজ থেকে বিশ্বর ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন।
তৃতীয় উইকেটে শান্ত ও মুমিনুল জুটি বাঁধার চেষ্টায় ছিলেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন তারা। বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে ডাউন দ্য উইকেটে এসে শট খেলেছেন। জায়গায় দাঁড়িয়ে পুল, সুইপ করেছেন। শট গুলোতে ঝুঁকি থাকলেও রান আসায় মুখে হাসি ছিল তাদের। কিন্তু ওই সেশনেই পণ্ড তাদের পরিশ্রম। বাংলাদেশের অধিনায়ক ফেরেন অল্পতেই। ২০ রান করে লাহিরু কুমারার বলে বোল্ড হন। আর মুমিনুল হক চা বিরতিতে যাওয়ার আগে শেষ ওভারে সুইপ করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন। ১৮তম ফিফটি ছুঁয়েই শেষ তার লড়াই।
বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটিটা পায়। ৭৯ মিনিট ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে ছিলেন সাকিব ও লিটন। দুজনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল আজকের শেষ বিকেলটা তারা কাটিয়ে দিতে পারবেন। দুয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ শট খেললেও ৯৯ বলের জুটিতে তারা আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু কিসের কি? অভিজ্ঞ ও লম্বা সময় কাটিয়ে দেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান যেভাবে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন তাতে তাদের টেস্ট মানসিকতা নিয়ে কঠিন প্রশ্ন তোলা যায়।
কামিন্দুর অফস্টাম্পের বাইরের বেরিয়ে যাওয়া বলে আলগা শটে খোঁচা দেন সাকিব। রিফ্লেক্সে দারুণ ক্যাচ দেন মাদুশঙ্কা। ৩ চারে ৫৩ বলে ৩৬ রান করে সাকিব ফিরলে তাদের ৬১ রানের জুটি ভাঙে। একটু পরই অহেতুক শটে লিটন বিদায় নেন। রান খরায় থাকা এই ব্যাটসম্যান কুমারার শর্ট বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটের নিচের কানায় লেগে বল যায় মেন্ডিসের হাতে। ৭২ বলে ৩৮ রানে থামে তার ইনিংস। শেষ বিকেলে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন কামিন্দু। তার শর্ট বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে বোল্ড শাহাদাত।
দিনের বাকিটা সময় মিরাজ পার করে দেন তাইজুলের সঙ্গে। ৩৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৫ রানের জুটিতে বড় স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নটা সময়ের কাছেই তোলা থাক। আপাতত ম্যাচ বাঁচানোর চিন্তাটা করা যাচ্ছে না।