মিরর স্পোর্টস : তিন দিনের আল্টিমেটামেও সমাধান না হওয়ায় লিগ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ‘ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব অর্গানাইজার্স অ্যাসোসিয়েশন’। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন ঘোষণা দেন ঢাকা ভিত্তিক ক্রিকেট ক্লাবের সংগঠকরা।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে বিসিবি কার্যালয়ে ফারুকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ক্রীড়া সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু ও লুতফর রহমান বাদল।
বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বাদল বলেন, “এটা স্পষ্ট, দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা খেলব না। খেলা থেকে বিরত থাকবো। আমরা খেলার পক্ষে, আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়ন্ত্রমূলক কার্যক্রম চলছে, এগুলো বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্রিকেটের সঙ্গে নেই, এবং ভবিষ্যতেও থাকবো না।”
বিসিবি গঠনতন্ত্রের সংশোধনি প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ক্লাবগুলো। প্রস্তাবনায় ক্লাবগুলোর কতৃত্ব কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ১৪ জানুয়ারি তারা তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন। আজ পুর্বঘোষণা অনুযায়ী বিসিবি প্রেসিডেন্টকে স্মারকলিপি দিয়ে সবধরণের খেলা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাবগুলো। এ সময় আহ্বায়ক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের পদত্যাগসহ বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি বাতিলের দাবি করেছে তারা
বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক ক্রীড়া সংগঠকদের এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন, “উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন খুব শিগগিরই বোর্ড মিটিং দেবেন। দু-এক দিনের মধ্যে। আমরা সংশোধনী কমিটি বাতিলের অনুরোধ করেছি, কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ দাবি করেছি, আমার ধারণা উনি সুষ্ঠভাবে সমাধান করবেন। আমরা তাকিয়ে আছি”- বলেছেন বাদল।
আন্দোলনের জেরে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। ২০ জানুয়ারি থেকে মাঠে গড়ানোর কথা ছিল লিগটি। আজ হওয়ার কথা ছিল ট্রফি উন্মোচন। এটিসহ বাকি লিগ গুলোর ভবিষ্যতও অন্ধকারে। এই লিগের পরই মাঠে গড়ানোর কথা ঢাকা প্রিমিয়ায়র লিগ। সমাধান না হলে প্রিমিয়ার লিগও বন্ধ থাকবে।
বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক স্মারকলিপি নিয়ে বলেন, “আমি মাত্র হাতে পেয়েছি। এটা পড়ে মন্তব্য করবো। ক্লাবগুলো আমাদের গুরত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা এটি বিবেচনা করবো।”
উল্লেখ্য, প্রস্তাবনা খসড়ায় দেখা যাচ্ছে নতুন করে সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করলেও বোর্ডে কমানো হচ্ছে ঢাকাভিত্তিক ক্রিকেট ক্লাবের কর্তৃত্ব আর বাড়ানো হচ্ছে ‘সরকারের প্রভাব’। বর্তমানে ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে ১২ জন পরিচালক আসতে পারবেন। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ক্লাব থেকে সেটি কমিয়ে মাত্র ৪ জন পরিচালকে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন ও থার্ড ডিভিশন ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে মাত্র ৪ জন পরিচালক আসতে পারবেন বোর্ডে।
ক্লাব ক্রিকেটের সংশ্লিষ্টতা কমলেও বাড়ছে ডিভিশন ও ডিসট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রভাব। আগে ১০ জন পরিচালক আসতে পারতেন বিভাগ ও জেলা থেকে। সেটি তিনজন বাড়িয়ে ১৩ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে ঢাকা বিভাগ থেকে পরিচালক একজন বাড়িয়ে তিনজন করা হচ্ছে।
এছাড়া, দুজন করে পরিচালক হবেন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে। একজন করে থাকবেন বরিশাল ও সিলেট থেকে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ইন্সটিটিউশন থেকে একজন বাড়িয়ে দুজন করা হচ্ছে। একই থাকছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে। আগের মত বর্তমান সংশোধনীতেও দুজন রাখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ২৫ জন পরিচালক থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ২১-এ। তাতে দেখা যাচ্ছে— বিভাগ, জেলা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ইন্সটিটিউশনের ১৭ জন পরিচালকই হবেন সংশ্লিষ্ট সরকারের আস্থাভাজন কেউ। তাতে বোর্ডে বাড়বে ‘সরকারের প্রভাব’ আর কমবে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কর্তৃত্ব।