মির ডেস্ক : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে কৃষ্ণশিলার তৈরি শ্রী রামচন্দ্রের মূর্তির। একইদিন কলকাতার রাজপথে ‘সর্ব ধর্ম সমন্বয়’র বার্তা দিয়ে ‘সংহতি যাত্রা’ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
এই যাত্রায় মমতার সঙ্গে যোগ দেন তার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্য নেতারাও।
মিছিল শেষে আয়োজিত সভা থেকে সর্বধর্ম সমন্বয়ে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি রামের বিরুদ্ধে নই। রাম-সীতাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তোমরা তো সীতার কথা বলো না। তোমরা কি নারী বিরোধী? সীতা না থাকলে রাম হয় না। আর কৌশল্যা দেবী না থাকলে, মা না থাকলে রামের জন্ম হয় না। মায়েরাই জন্ম দেয়। ১৪ বছর বনবাসে সীতাই রামের সঙ্গে ছিলেন। নিজেকে প্রমাণ করতে অগ্নিপরীক্ষাও দিতে হয়েছিল তাকে। আমরা জানি। আমরা তাই নারীশক্তি দুর্গার পূজা করি। রামও সেই দুর্গার পূজা করেছিলেন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার আগে।
বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আমি একাই পথে নেমেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোনো প্রয়োজন আছে কি না। ভয় না পেয়ে সব জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এসেছিলাম। এসব অনেকেই ভুলে গেছে।
অযোধ্যায় রাম মন্দিরে দুয়ার উন্মোচনের বিষয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সকাল থেকে সংবাদমাধ্যমে যা চলছে তাতে মনে হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রাম হচ্ছে। এমন প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু এর পরের দিন থেকে কী হবে? ভালো কাজ করলে তা আপনারা দেখান না। আর বিজেপি কিছু করলেই বিশ্ব গুরুকে দেখায় হিরো করে। আপনাদের বিক্রি করে খাচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে চাইলে এসব চ্যানেল দেখবেন না। দেখলেই আপনার টেনশন হবে। ওরা ইচ্ছা করে এসব করে।
রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে বিপুল খরচ নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা ব্যানার্জী বলেন, এরা খাবার পয়সা দেয় না। রাস্তার পয়সা দেয় না। বাংলা থেকে করের টাকা তুলে নিয়ে চলে যায়। আর আজ দেখুন, সব জায়গায় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে কী করছে। আমি বলবো, গরিবদের বলি দিয়ে ধর্ম করবেন না।
তিনি বলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আসল লোক ছিলেন শাহনেওয়াজ খান। তিনি ভেবেছিলেন, একজন হিন্দুর পাশে মুসলমান দরকার। আমি ২০ বছর ধরে নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন করতে বলেছি। সেটাকে করা হয় না। আর আজ নাকি ছুটির দিন। ওদের স্বাধীনতার দিন। কীসের স্বাধীনতা?
সভায় ইন্ডিয়া জোট নিয়ে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া, আমি দিয়েছি। অথচ বৈঠকে সম্মান পাই না। সিপিএম বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করে, আমি সেটি মানবো না। যাদের সঙ্গে আমরা জীবনের ৩৪ বছর ধরে লড়াই করেছি, তাদের কোনো পরামর্শ আমরা শুনবো না। আমাদের অনেক অসম্মান করা হয়। কিন্তু তাও আমরা বলেছিলাম, যে আঞ্চলিক দল যেখানে শক্তিশালী, সেই জায়গাটা তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক।
ভারতীয় কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, লোকসভা নির্বাচনে ৩০০ আসনে আপনারা এককভাবে লড়ুন, আমরা সাহায্য করে দেবো। আমরা আপনাদের কোনো আসনে লড়বো না। ওরা বলছে, ওদের যা ইচ্ছা হবে, তা-ই করবে। একটা কথা মনে রাখবেন, বিজেপিকে কেউ সাহায্য করলে আপনাদের কেউ ক্ষমা করবে না। আমি তো ক্ষমা করবোই না। আমাদের কাছে লড়াইয়ের সাহস আছে। কিন্তু আমাদের লড়াই করতে দেওয়া হয় না। আমরা মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার সব ধর্মীয় স্থানে গিয়েছি। আমরা চাই হিন্দু-মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সবাই একসঙ্গে ভাইয়ে-ভাইয়ে মিলেমিশে থাকুক।