সংঘাত-বিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে আরও ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তারা নাফ নদের তীরে জড়ো হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।
গত নভেম্বর দেশটির বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ) ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের সেনাবাহিনীকে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করার পর থেকে রাখাইন রাজ্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর যুদ্ধবিরতি থাকলেও গত নভেম্বর আরাকান আর্মি আবার লড়াইয়ে নামে। আরাকানের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বহিরাগত মনে করে সেখানকার সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ বাসিন্দারা, যা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে অর্ধশতাধিক বছর ধরে।
আরাকান আর্মি বলছে, তারা আরাকানের রাখাইন জনসংখ্যার জন্য আরও স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। যেখানে আরাকানে আনুমানিক ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে এবং ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বছর মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করছে। যোগ না দিলে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। অপরদিকে জান্তার বাহিনীতে রোহিঙ্গারা যোগ দিচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে তাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করেছে আরাকান আর্মি।
জাতিসংঘের রাইটস অফিসের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছেন, সম্প্রতি আরাকানের বুথিডাং ও মংডু শহরে লড়াইয়ের জেরে কয়েক হাজার বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
তিনি বলেন, আনুমানিক ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে নাফ নদের একটি এলাকায় পালিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন এলিজাবেথ থ্রোসেল।
জাতিসংঘ রাইটস অফিসের প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশকে ওই রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ রাইটস অফিসের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডেহেভার নির্যাতন পরিস্থিতিকে ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কমপক্ষে চারজনের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রমাণ পেয়েছি। আমরা স্যাটেলাইট ছবি, অনলাইন ভিডিও ও বিভিন্ন ছবি দেখে প্রমাণ পেয়েছি যে, বুথিডাং শহরটি ব্যাপকভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা এমন তথ্যও পেয়েছি যে, ১৭ মে থেকে আগুন জ্বালানো শুরু হয়। সামরিক বাহিনী শহর থেকে পিছু হটার দুই দিন পর আরাকান আর্মি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে।’
জেমস রোডেহেভার বলেন, ‘বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বুথিডাং থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক ডজন মৃতদেহ দেখেছে। অন্য একজন বলেছে যে সে হাজার হাজার লোকের মধ্যে ছিল যারা মংডু শহরের পশ্চিম দিকের রাস্তায় আরাকান আর্মি দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। অন্য জীবিতরাও বলেছে, আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে, যখন তারা শহরের দক্ষিণে রোহিঙ্গা গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মি ও মিয়ান আর্মির মাঝখানে আটকা পড়েছে।’ সূত্র : আলজাজিরা