মিরর ডেস্ক : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, শুধু কারও বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলেই তার বাড়ি বা সম্পত্তি ভেঙে ফেলার কোনও সুযোগ নেই। যেকোনও বাড়ি বা সম্পত্তি ভাঙার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মাবলী মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বেশ কয়েকটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দিলো। অভিযোগ করা হয়েছিল, অপরাধে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে কিছু রাজ্যে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ বা ‘বুলডোজার বিচারনীতি’ অনুসরণ করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সরকার নিজে বিচারক হয়ে সম্পত্তি ধ্বংস করতে পারে না। একটি ভবন বুলডোজার দিয়ে ভাঙার ভয়ঙ্কর দৃশ্য আইনশৃঙ্খলার অভাবকেই তুলে ধরে, যেখানে শক্তিই ন্যায় বলে মনে করা হয়।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, বাড়ি বা সম্পত্তি ভাঙার আগে ভুক্তভোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে যেন তিনি আদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি জানাতে বা বাড়ি খালি করতে পারেন।
এই রায় এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বুলডোজার জাস্টিস ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যদিও এসব ক্ষেত্রে অবৈধ নির্মাণের কারণ দেখানো হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপের কোনও বৈধতা নেই।
বিরোধী নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপের শিকার হয়েছেন অনেকেই। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ধর্মীয় সহিংসতা বা প্রতিবাদের পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়িঘরেই এই ধরনের ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা অপরাধ দমনে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে এ ধরণের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন।
বুধবার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট কঠোর ভাষায় এই প্রথাটির সমালোচনা করে বলেছে, গণতান্ত্রিক সংবিধানের অধীনে এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং স্বৈরাচারী পদক্ষেপের কোনও স্থান নেই।
আদালত আরও জানিয়েছে যে, যারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
আদালত এরপর একটি গাইডলাইন জারি করেছে। এতে স্পষ্ট করা হয়েছে, যেকোনও বাড়ি ভাঙার আগে অন্তত ১৫ দিন সময় দিয়ে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশে স্পষ্টভাবে ভাঙার কারণ জানাতে হবে। অভিযুক্ত ১৫ দিনের মধ্যে এই নোটিশের জবাব না দিলে, কর্তৃপক্ষ ভাঙার কাজ এগিয়ে নিতে পারবে তবে পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও ধারণ করতে হবে।
আদালত সতর্ক করেছে যে, এই গাইডলাইন লঙ্ঘন করলে আদালত অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হবে।
পুরো শুনানিজুড়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে সম্পত্তি ধ্বংসের এই প্রথার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এ মাসের শুরুতেও আদালত পর্যবেক্ষণ করেছিল যে শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়ি ভাঙা আইনের শাসনের পরিপন্থি এবং এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এছাড়া, আদালত বলেছে, জনগণের কণ্ঠস্বর সম্পত্তি ধ্বংসের হুমকিতে থামিয়ে দেওয়া যায় না।
সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইনকে এমন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, আদেশটি কার্যকর করা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধ হয়।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই রায়ের প্রশংসা করে বলেছে, যদিও রায়টি দেরিতে এসেছে। তবু এটি জনগণের অধিকার রক্ষায় স্বাগত জানানোর মতো একটি পদক্ষেপ।