মিরর ডেস্ক : আফগানিস্তানে তালেবান নিয়ন্ত্রিত কারাগারে সশস্ত্র ব্যক্তি ব্যক্তিদের দ্বারা এক আফগান নারী অধিকারকর্মীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওটি পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এটি পর্যালোচনার পর সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভিডিওটি এমন একটি অপরাধের প্রমাণ যা আগে কেবল অভিযোগ হিসেবে শোনা গিয়েছিল।
দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, মোবাইল ফোনে ধারণ করা ফুটেজের ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ব্যক্তি একাধিকবার ওই নারীকে ধর্ষণ করছেন। তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করতে ভিডিওটি পরে সেই নারীকে হুমকি হিসেবে পাঠানো হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই নারী নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন। হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকতে চান। এক ব্যক্তির আদেশ মানতে দেরি করলে তাকে ধাক্কা দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে বলা হয়, এত বছর তুমি আমেরিকানদের দ্বারা নষ্ট হয়েছো, এখন আমাদের পালা।
ওই নারী জানিয়েছেন, তালেবানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদে অংশ নেওয়ায় ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাকে কারাগারে আটক রেখে ধর্ষণ করা হয়। এখন তিনি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে নির্বাসনে রয়েছে।
তিনি বলেছেন, বিদেশে নির্বাসনে তালেবানদের বিরুদ্ধে কথা বলার পর তাকে এই ভিডিও পাঠানো হয়। তাকে হুমকি দেওয়া হয়, যদি তিনি সমালোচনা চালিয়ে যান, তাহলে এই ভিডিও তার পরিবার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকার করা হবে।
ওই নারী মনে করেন, তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিওটি ইচ্ছাকৃতভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। যাতে করে এটি ব্যবহার করে তাকে চুপ ও কলঙ্কিত করা যায়। ভিডিও ধারনের তাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাকে যাতে চেনা যায় সেভাবেই ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
গত সপ্তাহে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, কিশোরী ও তরুণীরা তালেবানের কঠোর হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হলে তাদের ওপর যৌন নির্যাতন ও মারধর করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে তালেবান যোদ্ধাদের হাতে আটক হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর একটি খালে এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে। পরিবারটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র অভিযোগ করেছে, মৃত্যুর আগে ওই নারীকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল।
জাতিসংঘের আফগানিস্তান-বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, কারাগারে নারীরা সম্ভবত যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর থেকে তালেবানরা আফগানিস্তানের ১ কোটি ৪০ লাখ নারী ও মেয়েদের ওপর কঠোর রক্ষণশীল আইন প্রয়োগ করছে। মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কাজে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, উন্মুক্ত পার্কে হাঁটা ও জিম বা বিউটি পার্লারে যাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া কঠোর পোশাকবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালেবানরা নারীদের প্রকাশ্যে চাবুক মারা এবং পাথর ছুঁড়ে হত্যার আইনও ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী এবং নারী অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, তারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য আটক হওয়ার পর তালেবান যোদ্ধাদের নির্যাতন ও মারধরের শিকার হয়েছেন।
জারিফা ইয়াকুবি (৩০) নামের নারী বলেছেন, তাকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল যে, তিনি বিদেশিদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য।
অপর এক নারী পারওয়ানা নেজারাবি (২৩) বলেছেন, প্রতিবাদ করার কারণে তাকে আটক করা হয়। আটক অবস্থায় তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং মারধর করা হয়। জোরপূর্বক নেওয়া স্বীকারোক্তির পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে তিনি আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যান।
নিরাপত্তা নিয়ে বড় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানে নারীরা এখনও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন এবং তালেবান শাসনের সমালোচনা করছেন। গত দুই বছরে ২২১টি প্রতিবাদের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কারাগারে নারীদের ওপর ব্যাপক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিদার বার বলেছেন, তালেবানরা কারাগারে নারীদের নির্যাতনে দায়মুক্তি পাচ্ছে।
গত সপ্তাহে তালেবান কর্মকর্তারা দোহায় জাতিসংঘের উদ্যোগে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে বৈঠকে কোনও আফগান নারী উপস্থিত ছিলেন না এবং এজেন্ডায় নারীদের অধিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।