ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত বাদ দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদাকে ‘হুমকি’ দিয়েছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন।
২০২১ সালে শুরু হওয়া অধিকৃত ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত চলাকালীন ফাতু বেনসুদাকে একাধিকবার ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেন কোহেন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সংবাদে এ তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের ওই তদন্তটি গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে।
ইসরায়েলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোসাদের পরিচালক থাকা অবস্থায় আইসিসির বিরুদ্ধে অভিযানে কোহেন সম্পৃক্ত হয়েছিল। তার এ কার্যক্রম উচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদিত ছিল।
অন্য একটি ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, মোসাদের উদ্দেশ্য ছিল বেনসুদাকে আপস করানো বা তাকে এমন একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা যে ইসরায়েলের দাবিতে সহযোগিতা করবে।
তৃতীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই অপারেশনে কোহেন নেতানিয়াহুর ‘বেসরকারি বার্তাবাহক’ হিসেবে কাজ করছিলেন।
মোসাদপ্রধান থাকাকালীন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন ছিলেন কোহেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আদালতকে দুর্বল করার জন্য দেশটির প্রায় দশকব্যাপী প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
কোহেনের ক্রমাগত হুমকির বিষয়টি বেনসুদা আইসিসির কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন বলে চারটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব হুমকির মধ্যে একটি বার্তায় কোহেন বলেছেন, ‘আপনাদের আমাদের সাহায্য করা উচিত এবং আমাদের আপনার যত্ন নেওয়া উচিত। আপনি এমন কিছুতে পড়তে চান না যা আপনার বা আপনার পরিবারের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কোহেনের কার্যকলাপ সম্পর্কে বলেছেন, ভয় দেখানো এবং প্রভাবিত করার চূড়ান্ত ব্যর্থ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বেনসুদার বিরুদ্ধে ‘ঘৃণ্য কৌশল’ ব্যবহার করেছিলেন কোহেন।
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি প্রকাশনা ৯৭২ ম্যাগাজিন এবং হিব্রু-ভাষার আউটলেট লোকাল কলের একটি তদন্তের অংশে গার্ডিয়ান প্রকাশ করে, কীভাবে একাধিক ইসরায়েল গোয়েন্দা সংস্থা প্রায় এক দশক ধরে আইসিসির বিরুদ্ধে একটি গোপন ‘যুদ্ধ’ চালিয়েছিল।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রকে আঘাত করার জন্য এসব অপপ্রচার চালানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে কোহেন এবং বেনসুদা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাম্প্রতি আইসিসির বর্তমান প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বলেছেন, আইসিসি কর্মকর্তাদের ‘প্রতিবন্ধকতা, ভয় দেখানো বা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা’ এর বিচার করতে দ্বিধা করবেন না। মূলত এর পরেই বেনসুদাকে প্রভাবিত করতে মোসাদের প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে আসে।
আইন বিশেষজ্ঞ এবং আইসিসির প্রাক্তন কর্মকর্তাদের মতে, বেনসুদাকে হুমকি বা চাপ দেওয়ার জন্য মোসাদের প্রচেষ্টা রোম সংবিধির ৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপরাধের সামিল। সূত্র : গার্ডিয়ান