৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Mirror Times BD

এমপি আনার হত্যা: মেডিকেল ভিসায় ভারতে যান মোস্তাফিজ-ফয়সাল, খরচ দেন শাহীন

মিরর ডেস্ক : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ভারতে গিয়েছিলেন মেডিকেল ভিসায়। জরুরি-ভিত্তিতে তাদের পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট করানোর সব খরচ বহন করেন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন। বিষয়টি তদারকি করেন ঘাতক দলের প্রধান সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) আসামি মোস্তাফিজকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। পরে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আসামি মোস্তাফিজের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে টাকা দেন শিমুল ভূঁইয়া

জবানবন্দির আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে বড় অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য কলকাতায় যেতে বলেন শিমুল ভূঁইয়া। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিটসহ সব কাজ শিমুল ভূঁইয়া করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে টাকাও দেন শিমুল ভূঁইয়া। ১৫ এপ্রিল খুলনা থেকে ঢাকায় এসে শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় ওঠেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। পরদিন শাহীনের পিএস সিয়াম হোসেন এসে তাদের যমুনা ফিউচার পার্কের ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। এসময় সিয়াম মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে বলেন শাহীন স্যারই আপনাদের পাসপোর্ট করার জন্য টাকা দিয়েছেন। তিনিই আপনাদের দ্রুত ভিসা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

মোস্তাফিজ-ফয়সালের ভিসার জন্য প্রচুর টাকা খরচ করেন শাহীন

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, আনুমানিক ১৫-২৪ এপ্রিল মোস্তাফিজ ও ফয়সাল শাহীনের তত্ত্বাবধানে বসুন্ধরার বাসায় ছিল। এসময় শাহীনের পিএস সিয়াম হোসেন তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। সিয়াম তাদের জানিয়েছিল, তাদের ভিসার জন্য শাহীন ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মেডিকেল প্রেসক্রিপশনসহ আনুষঙ্গিক কাজে প্রচুর টাকা খরচ করেছেন। আনুমানিক ২৫ এপ্রিল ভারতীয় মেডিকেল ভিসা পেয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ফিরে যান। এরপর শিমুল ও শাহীনের পরিকল্পনা মোতাবেক মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ২ মে কলকাতায় যান এবং নিউমার্কেট এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের বাসায় যান মোস্তাফিজুর।

মিশন শেষে বসুন্ধরার বাসায় ওঠেন মোস্তাফিজ-ফয়সাল

মিশন শেষে ১৯ মে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। ওঠেন শাহীনের বসুন্ধরার বাসায়। পরবর্তীতে আনারের মেয়ে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা রুজু করলে মূল ঘাতক শিমুল ভূঁইয়া গ্রেফতার হয়। এতে পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় পাসপোর্ট রেখে পালিয়ে যান মোস্তাফিজ-ফয়সাল
গ্রেফতারের পর ৬ দিনের রিমান্ডে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তারা। ভারতে যাওয়া-আসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা (মোস্তাফিজ ও ফয়সাল) জানান, তাদের পাসপোর্ট শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় রেখে পালিয়েছেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

গত ২৬ জুন ফয়সাল আলী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল। এদিন দুপুর থেকে হেলিকপ্টারে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ২৭ জুন আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ। ওইদিন শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ তাদের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ মামলায় এর আগে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া, সিলিস্তি রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তাদের মধ্যে মিন্টু ছাড়া চারজনই দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই। ১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো’।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।

এছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে, এজাহারে উল্লেখ করেন ডরিন।

⠀শেয়ার করুন

loader-image
Dinājpur, BD
অক্টো ৯, ২০২৪
temperature icon 25°C
moderate rain
Humidity 89 %
Pressure 1010 mb
Wind 4 mph
Wind Gust Wind Gust: 5 mph
Clouds Clouds: 87%
Visibility Visibility: 10 km
Sunrise Sunrise: 06:01
Sunset Sunset: 17:44

⠀আরও দেখুন

Scroll to Top